dse lago curentশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ‘স্বল্প সুদে’ ঋণ নেয়ার আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। ফলে তহবিলের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এখনো অলস পড়ে আছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় গঠিত ৯০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬৫০ কোটি বিনিয়োগ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ‘স্বল্প সুদে’ ঋণ নেয়ার জন্য আবেদন পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে খুব একটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য গঠিত তহবিলের অর্থ তিন ধাপে ছাড় করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের ইক্যুইটি বেশি ঋণাত্মক, তাদের এ ঋণ নেয়ার আগ্রহ নেই বললেই চলে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের কাছ থেকে নেয়া মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ ও ঋণ পরিশোধে পুনরায় সুদে (৯ শতাংশ) ঋণ নেয়ার ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ খুব কম।

এ তহবিলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম রব্বানী জানান, ‘২৮ জুলাই পর্যন্ত এ তহবিল থেকে ৬৪২ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ তহবিলে এখনো জমা রয়েছে ২৫৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তহবিলের মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণে তা আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’

প্রণোদনার এই অর্থ ব্যবহার তদারকি করতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কথা হয় এ কমিটির আহ্বায়ক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আছে বলেই প্রায় সাড়ে ছয়শ’ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। বাকি টাকাও শিগগিরই বিতরণ হবে। ইতোমধ্যে দুটি ব্রোকারেজ হাউজ এই অর্থ বিতরণের জন্য যাবতীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। ২৫ হাজার ২০০ জন বিনিয়োগকারী সহজ শর্তের এ ঋণ নিয়ে উপকৃত হয়েছেন’ বলে দাবি করেন তিনি।

তবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে খুব একটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে বাজারের পরিস্থিতিও তেমন নয় যে, বাজার থেকে মুনাফা করে কিস্তি দেয়া সম্ভব। তাই অনেকেই এ ঋণ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হননি। ঋণের শর্ত আরো সহজ করার দাবি জানান তারা।

সালাউদ্দিন সবুজ নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে যাওয়ায় এখন তহবিলের ঋণের চাহিদা নেই। ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। যে কারণে প্রণোদনার ঋণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আগ্রহ নেই।’ গত দুই বছরে বারবার তাগাদা দিয়েও ওই তহবিল থেকে নতুন করে ঋণ নেয়ার আশানুরূপ আবেদন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, এ তহবিলের টাকা নিতে বিনিয়োগকারীদের বেশকিছু শর্ত পালন করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ঋণের জামানত হিসেবে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক- ব্রোকারকে কর্পোরেট গ্যারান্টি দিতে হবে, ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে বিএসইসি সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করতে পারবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক/স্টক ব্রোকার) নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দর পতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সহজশর্তে ঋণ দিলে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ৯০০ কোটি টাকা বিতরণ করা যেতো।

উপকৃত হতেন লাখো বিনিয়োগকারী। তবে এভাবে বাজারের উন্নতি করা যাবে না। দরকার ভালো কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসা। দুর্বল কোম্পানিকে আইপিওর অনুমোদন দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আবারো রাস্তায় নামানো হচ্ছে। ফলে ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে’ বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীদের এ নেতা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভি বলেন, ‘এ তহবিলটা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য। ২০১০ সালে সূচকের বড় ধসের পরে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু সবাই এ তহবিলের সুবিধা পাচ্ছেন না। এর আওতা আরো বাড়ানো দরকার’ বলে মনে করেন তিনি। এ সময় বাজারের টেকসই উন্নয়নের জন্য আরো ‘বিনিয়োগ বাড়ানোর’ পরামর্শ দেন শাকিল রিজভী।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছর আগে এ ঋণ নেয়ার জন্য ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কর্মকর্তারা আইসিবিতে আসা-যাওয়া করতেন, নানা শর্তের কারণে অর্থ না পেয়ে তারা ব্যাংক ঋণের দিকে ঝুঁকছেন।

সহজশর্তে ঋণ প্রদান ও শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক গতি ফিরে এলে বিনিয়োগকারীরা এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সরকারের এ প্রণোদনা থেকে ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগকারীদের নানা শর্তের বেড়াজালে পড়তে হয়। আবার সুদের হারও বেশি। এসব কারণে এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’

প্রসঙ্গত, সরকার ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বিশেষ স্কিমের ঘোষণা দেয়। সরকারি ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়নের তিন কিস্তি বাবদ ৯০০ কোটি টাকা আইসিবিকে দেয়। এ তহবিলের মেয়াদ ছিল তিন বছর। পরে এক বছর বাড়ানো হয় অর্থাৎ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।