BANK LAGOশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দশ ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় হয়েছে। অবশেষে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়কে ঘিরে পুঁজিবাজারে যে ভীতি তৈরি হয়েছিল, তারও অবসান হবে। এতে এতদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, অন্যদিকে ধীরে ধীরে লেনদেন বাড়বে।

সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়িয়ে পুঁজিবাজারে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে ১০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মাধ্যমে কোনো শেয়ার বিক্রি ছাড়াই ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মোট ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ারবাজারে নির্ধারিত সীমার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এবি, দ্য সিটি, ন্যাশনাল, শাহ্জালাল ইসলামী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, জনতা, পূবালী, বিডিবিএল, মার্কেন্টাইল, আইএফআইসি ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।

এর মধ্যে বিডিবিএল ছাড়া বাকি ১০ ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান হয়েছে। অতিরিক্ত বিনিয়োগের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূলধন বৃদ্ধির প্রস্তাব এরই মধ্যে অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর শেষ সময়ে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিডিবিএল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এটিও অনুমোদনের অপেক্ষায়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন জানিয়েছে ১০ ব্যাংক। বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, আজকের কমিশন সভায় এর অনুমোদন আসতে পারে।

প্রসঙ্গত, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ জুলাই তথা আগামীকালের মধ্যে শেয়ারবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বিক্রয়চাপের আশঙ্কায় ২০১৫ সাল থেকে শেয়ারবাজারে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়।

তবে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে ব্যাংকগুলোকে কোনো শেয়ার বিক্রি করতে হবে না, গত মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন ঘোষণায় স্বস্তি ফিরে আসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

সে সময় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, কেস টু কেস ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ সমস্যার সমাধান করা হবে। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ ও সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণসংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারির মূলধনে রূপান্তরের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে। সে সময় জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ কার্যক্রমের জন্য গঠিত ব্যাংকের নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে প্রদত্ত মূলধন শেয়ারবাজার ওই ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে না।

কোনো কোম্পানিতে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি বিনিয়োগও শেয়ারবাজার তথা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে উদ্ভূত কোনো ক্ষতির জন্য প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও শিথিলতা আনা হয়।

তবে পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করে ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ও নিজস্ব পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের মোট পরিমাণের ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না মর্মে এক নির্দেশনা জারি করা হয়।

এতে এককভাবে ব্যাংক তার ইকুইটির ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। আর সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিতভাবে তা হয় ৫০ শতাংশ। ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের ফলে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, যা ব্যাংকের বিনিয়োগ-সক্ষমতা সংকুচিত করে। অবশ্য এ নির্দেশনা জারির প্রায় ১ বছর ১০ মাস পর তা প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত)-এর ৪৫ ধারায় অর্পিত বিশেষ ক্ষমতাবলে সহযোগী প্রতিষ্ঠানে দেয়া মূলধন শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের একক হিসাবের বাইরে রাখার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে ব্যাংকের সহযোগী ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা মূলধন আর ব্যাংকের একক বিনিয়োগ হিসেবে হিসাবায়ন থেকে বাদ দেয়া হয়। ফলে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ অনেকটাই কমে আসে। এর পরও ১১টি ব্যাংকের যে পরিমাণ অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল, তা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূলধনে রূপান্তর হওয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হলো।

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে দরপতন হলে ২০১৫ সালে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিনিয়োগ সমন্বয়ে সময় বাড়ানোর আহ্বান করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সমন্বয়ের সময়সীমা দুই বছর বাড়ানোর ঘোষণা দেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই আইন পরিবর্তন না করে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় হলো।