dse-cse lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামুখী তৎপরতার পরও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে বাজার স্থিতিশীলতার আভাস দিলেও তা বেশি দিন টিকছে না। বরং যতই দিন যাচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে ততই অস্থিরতা বিরাজ করছে।

আর এই অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে বাজার মূলধন, লেনদেন ও মূল্য সূচকের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যার ধারাবাহিকতায় বাজার থেকে প্রতিদিনই মূলধন উধাও হচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজার মূলধন আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের গতি ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হলেও স্বল্পমেয়াদি কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে বর্তমানে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ছাড়াও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি আস্থাহীনতায় রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিশেষ কোনো প্রণোদনা না দিয়েই পুঁজিবাজার জেগে ওঠার স্বপ্নের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শেয়ারবাজার এখন নিয়মমাফিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে ও স্থিতিশীলতা এসেছে। একই সঙ্গে ফটকাবাজির (কারসাজিমূলক লেনদেন) অবসান ও নির্মূল হয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজার এবার জেগে উঠবে।’

এদিকে বাজারে যে পরিমাণ শেয়ার বেড়েছে সেই হারে বিনিয়োগকারী বাড়েনি। এ অবস্থার উন্নতি চাইলে আর্থিক ভিত্তি খুবই মজবুত অবস্থানে আছে এমন কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে বাজার স্থিতিশীলতায় সরকারের পাশাপাশি স্টেক হোল্ডারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে বাজার মূলধন উধাও হয়েছে ১৪ হাজার ৯২২ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে (৩০ জুন ২০১৫) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে (৩০ জুন ২০১৬) বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ১৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা এক দশমিক ৮৯ শতাংশ।

একই ভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে (অর্থ্যৎ ৩০ জুন ২০১৫) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকায় এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছর (৩০ জুন ২০১৬) শেষে বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৬১১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট বেচাকেনায় মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লেনদেনের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে লেনদেন কমেছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের শেষ দিন (৩০ জুন) ডিএসইতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ দিন এসে ওই মূল্য সূচক দাড়িয়েছে ৪ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে। এক বছর ওঠানামা শেষে মূল্য সূচকের ব্যবধান বা কমেছে ৬৬ পয়েন্ট।

অপরবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক ২০১৫-১৬ বছরের শেষ দিন দাড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৯৬ পয়েন্টে। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শেষ দিন ছিল ৮ হাজার ৫৮৪ পয়েন্টে। এক বছরে ব্যবধানে সিএসইর সার্বিক সূচক কমেছে ১৮৮ পয়েন্ট। বছরের ব্যবধানে মূল্য সূচকেরও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব ডিএসইর রাজস্ব আদায়েও পড়েছে। যার ফলে অর্থবছরের ব্যবধানে ডিএসইর রাজস্ব আদায় অনেকটা কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শেষে ডিএসই থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯২ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৫ টাকা বা ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিল ১৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৭ টাকা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে আগের চেয়ে শেয়ার সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু চাহিদা নেই। তাই চাহিদাসম্পন্ন ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে বাজার পরিস্থিতি অনেকটা গতিশীল হবে বলে মনে করছেন তারা।