shajibazar lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারেন তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এসপিসিএল) সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান পেট্রোমেক্স রিফাইনারি লিমিটেডের পরিচালকদের জরিমানা কমিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কমিশনের নিয়মিত সভায় পেট্রোমেক্স পরিচালকদের জরিমানা অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে গত বছর পেট্রোমেক্স রিফাইনারির ছয় পরিচালক ফিরোজ আলম, ফরিদুল আলম, রেজাকুল হায়দার, আনিস সালাউদ্দিন আহমেদ, একেএম বদিউল আলম ও মো. সামসুজ্জামানকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। পরবর্তীতে জরিমানা পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলে কমিশন সম্প্রতি জনপ্রতি জরিমানা ৫ লাখ টাকায় নামিয়ে আনে।

এর আগে আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য সরবরাহ করার দায়ে এসপিসিএলের সব পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে মোট ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করে পরবর্তী সময়ে তা কমিয়ে আনে কমিশন।

এদিকে কোম্পানির পরিচালকদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে এসপিসিএলের শেয়ারকে মার্জিন ঋণ সুবিধার বাইরে রাখার নির্দেশনা বহাল রেখেছে কমিশন। শেয়ার দরে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রুখতে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর এসপিসিএলের শেয়ারে ঋণসুবিধা বাতিল করে বিএসইসি।

একই সঙ্গে স্বাভাবিক বাজারের পরিবর্তে নগদ টাকায় কেনাবেচার (স্পট মার্কেটে) বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ১৪ জুলাই স্পট থেকে স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে এলেও মার্জিন সুবিধা পুনর্বহাল করা হয়নি। এছাড়া প্রতিদিনের লেনদেন শেষে এসপিসিএলের শেয়ার লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর প্রতি যে নির্দেশনা ছিল, তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

মার্জিন সুবিধা প্রত্যাহার করায় গত দুই বছরে শেয়ারটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দর হারায়। গত এপ্রিলে শেয়ারটি ৯০ টাকায় নেমে আসে। তবে সরকার রিফাইনারি থেকে ক্রয়কৃত জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দিলে এর দর আবার বাড়তে থাকে। গতকাল এ কোম্পানির শেয়ার দর ১৩৫ টাকায় উন্নীত হয়।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী মূল্য আয় অনুপাত ৪০ বা এর নিচে থাকলে কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনায় মার্জিন সুবিধা পাওয়া যায়। বুধবার লেনদেন শেষে এ কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ২৮। তবে এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীরা কোনো মার্জিন ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না।

প্রসঙ্গত, এসপিসিএলের শেয়ারে কারসাজির দায়ে গত বছর আট প্রতিষ্ঠান ও সাত ব্যক্তিকে প্রায় ৫ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। এর বাইরে এসপিসিএলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার ক্রয় ও তা সংরক্ষণের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শেয়ার দর বাড়ানোয় তিন ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

তবে কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ইয়াজদানীকে মামলার পরিবর্তে বড় অঙ্কের জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। তবে একই শেয়ারে কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারী গোলাম মোস্তফা, নাসিমা আক্তার লতা এবং গোলাম মোস্তফার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্টার শেয়ারবাজার লিমিটেডের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন।

প্রসঙ্গত, কমিশনের অনুমোদনক্রমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পর ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে একযোগে এসপিসিএলের শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। তবে লেনদেনের কয়েক কার্যদিবসে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় একই বছরের ৪ আগস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। এর পর দরবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।

লেনদেন শুরুর ১৩ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৮৯ টাকায় উন্নীত হয়। পরবর্তীতে কোম্পানির অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদনের বিষয়টি প্রকাশ না করা ও অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির জন্য এর শেয়ার লেনদেনে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা চালায় বিএসইসি। অস্বাভাবিক চাহিদার কারণে মাত্র এক মাসে শেয়ারটির দর ৮৯ টাকা থেকে ৩৩৮ টাকায় উন্নীত হয়।

পরবর্তীতে বিশেষ নিরীক্ষায় কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস ২ টাকা ৫০ পয়সার পরিবর্তে ১ টাকা ৪৮ পয়সায় নেমে আসে। আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য সরবরাহ করার দায়ে শাহজিবাজার পাওয়ারের সব পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জরিমানাও করে কমিশন। আর্থিক বিবরণীতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড (বিএএস) পরিপালন না করায় এসপিসিএলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএফও) ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।