bsec lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রায় দেড় বছর পর সংশ্লিষ্ট বিধিমালার চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যা শিগগিরই জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করা হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর আইনটির বাস্তবায়ন হলে বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বাড়বে। এতে করে বাজারের অন্যান্য বিনিয়োগকারীদেরও যোগসাজুস বাড়বে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছরের ২২ জুনের মধ্যে ইটিএফ চালুর পরিকল্পনা ছিল বিএসইসির। তবে এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি না থাকায় গত মার্চে অর্থ মন্ত্রণালয় অসন্তোষ প্রকাশ করে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৫৭৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএসইসির নিবার্হী পরিচালক ও মূখপাত্র এম. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্টক এক্সচেঞ্জের নির্দিষ্ট সূচক, সূচকভুক্ত কোম্পানি কিংবা নির্দিষ্ট খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে দেড় বছর ধরে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড চালু করতে যৌথভাবে কাজ করছে দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো।

বিদ্যমান মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার আওতায় বিশেষ ধরনের এ সামষ্টিক তহবিল চালু বা পরিচালনা সম্ভব না হওয়ার কারণেই আলাদা বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের সংঘ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) সিদ্ধান্ত অনুসারে, ইটিএফ ও মিউচুয়াল ফান্ডের মতো অন্যান্য সমষ্টিগত বিনিয়োগ তহবিলের (সিআইএস) জন্য আলাদা বিধিমালা থাকতে হবে সদস্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইটিএফ কে কালেকটিভ ইনভেষ্টমেন্ট স্কীম হিসেবে চালু করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন  (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) রুলস, ২০১৬ আজকের সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগ গত ২৬ মার্চ  অনুষ্ঠিত ৫৭৪তম সভায় এ ফান্ডের খসড়া অনুমোদন দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

জানা যায়, কালেকটিভ ইনভেষ্টমেন্ট স্কীম এর আওতায় এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বে-মেয়াদী হিসেবে গঠিত হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হবে। ফান্ডে নূন্যতম আকার হবে ৫০ কোটি টাকা তবে অথরাইজড পার্টিসিপেন্টস এর মাধ্যমে ক্রিয়েশন ও রিডেম্পশন দ্বারা ফান্ডের আকার পরিবর্তন সম্ভব হবে।

যেহেতু ফান্ডটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হবে সেহেতু ফান্ডের এনএভি ও বাজার এর মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হলে অথরাইজড পার্টিসিপেন্ট গণ  আর্বিট্রেজ ফাঙ্কশন পালন করবে। এছাড়া এ ফান্ডের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকার/ স্টক ডিলার ঘন যারা অথরাইজড পার্টিসিপেন্টস হিসেবে কাজ করবেন তারা মার্কেট মেকারের ভূমিকাও পালন করবেন।

এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড মূলত ইনডেক্স বেসড ফান্ড যা জেনারেল ইনডেক্স অথবা ইসলামিক ইনডেক্স বেসড হতে পারে। ইলিজিবল ইনভেস্টরদের নিকট প্রাইভেট প্লেসমেন্টে এর মাধ্যমেই মূলত ফান্ড গঠিত হবে। তবে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ফান্ড গঠিত না হলে কমিশনের অনুমোদনক্রমে পাবলিক অফারের মাধ্যমেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, দেশীয় পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) গঠিত হচ্ছে। ইটিএফ এক প্রকার বেমেয়াদি (ওপেন এন্ডেড) সামষ্টিক বিনিয়োগ তহবিল। বেমেয়াদি হলেও এ ফান্ডের ইউনিট সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেন করা যায়।

মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এর কিছু পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডের তহবিল দিয়ে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা যায়। আর ইটিএফ শুধু শেয়ারবাজারের সূচক, সূচকভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা পূর্বনির্দিষ্ট খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হয়।

সাধারণত যেসব বিনিয়োগকারী নির্ধারিত সূচকে অন্তর্ভুক্ত সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান, কিন্তু সক্ষমতা নেই এবং যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী পোর্টফোলিও খরচ কমাতে চান, তারাই ইটিএফ ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইটিএফ এর অর্থ সংগ্রহ করা যায় না। বাজারে শুধু বড় ব্লক ইস্যু করতে পারে, যা ‘ক্রিয়েশন ইউনিট’ নামে পরিচিত। সাধারণত ব্যাংক, ব্রোকার-ডিলার, ট্রেডিং হাউজ এবং ইনস্টিটিউশনাল ফার্ম বা বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত অংশগ্রহণকারীরা ইটিএফের ক্রিয়েশন ইউনিট নিতে পারবেন। ক্রিয়েশন ইউনিট কেনার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এর পৃথকীকরণ করতে পারবেন এবং সেগুলো সেকেন্ডারি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।