dse-up-dowenশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের টালমাতাল পরিস্থিতিতে অস্থির বিনিয়োগকারীরা। তারা বর্তমান বাজারের গতিবধি বুঝে উঠতে পারছেন না। তাছাড়া বাজারের এ আচরন মেনে নিতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তারা বাজেট পরবর্তী বাজার স্থিতিশীলতার আশা করেছিলেন। কিন্তু বাজেট ঘোষনার পর থেকেই বাজারের অবস্থা অস্থির। বাজেট ঘোষনার পর থেকেই প্রতিদিনই সুচকের দরপতন ঘটছে।

এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে দরপতন চলছে পুঁজিবাজারে। কারসাজি চক্রের তৎপরতা, তারল্য সংকটসহ নানা কারণে আস্থাহীনতায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে দরপতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন উভয় বাজারে প্রধান সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটের দর।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে কোনো ধরনের প্রণোদনা না থাকায় আস্থার অভাবে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। তবে এখনো স্টক হোল্ডারসহ বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা করছে বাজেট পাসের আগে সরকার শেয়ারবাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনাগুলো মেনে নেবে।

তাহলে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে বিনিয়োগকারীদের, চাঙ্গা হবে শেয়ারবাজার। অন্যদিকে বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জোরালো দাবিগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া ডিএস৩০ সূচক দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

প্রতি বছর বাজেটকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর বিভিন্ন প্রণোদনা থাকায় এর ইতিবাচক প্রভাবও দেখা যায়। চলতি বছরও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সরকারের অনেক নীতিনির্ধারক বিভিন্ন সময় আভাস দিয়েছেন, শিগগিরই বাজার গতিশীল হবে।

বাজেটের আগে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ একাধিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে শেয়ারবাজার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন। এসব সংবাদে বাজেটের পর বাজার গতিশীল হওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। ডিএসই ও এসইসিকে বাজেট নীতিসহায়তা হিসেবে ট্যাক্স অব্যাহতি দিলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্রণোদনা বা লভ্যাংশের কর কমানোর দাবি প্রতিফলিত হয়নি। এর ফলে প্রতিদিনই কমছে সূচক ও লেনদেন।

প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর আরও ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে। বাজেটের পর ধারাবাহিকভাবেই কমেছে সূচক। গত কয়েক দিনে লেনদেনও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এই কয়েক দিনে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। এতে ব্যাপকভাবে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা ও শিল্পে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বাজারে যেসব কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ার আসছে, সেগুলোর খুবই ছোট মূলধনি। কিছু জাঙ্ক শেয়ারও আপলোড হচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হচ্ছে না।

বড় কোম্পানি, বিশেষ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, টেলিকম খাত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আসছে না। বাজেটে যদি কিছু কর সুবিধা দিয়ে এসব কোম্পানি আনা যেত, তাহলে হয় তো পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াত।

তিনি বলেন, বাজেটে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুবিধা দেওয়া হলেও অনেকের আস্থা আসত। এ ছাড়া শেয়ার মুনাফার ওপর ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আস্থা ফিরতে পারত।

এ বিষয় ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাতের অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি এ খাতের। প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরই ১০ টাকার কাছাকাছি। অনেকগুলো এরও নিচে। ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতার প্রভাবে শেয়ারবাজারে এমন পরিস্থিতি।

অন্যদিকে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বৃহৎ বিনিয়োগ পরিস্থিতিও নেতিবাচক। ফলে বাজারে বিনিয়োগ করতে অনেকে সাহস পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ ব্রোকারেজ হাউসের পরিস্থিতিও খারাপ। এ অবস্থার উন্নতি কবে হবে তা মনে হচ্ছে কেউ জানে না। তবে জুলাইয়ের পর কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে আমার ধারণা।’