share stockশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: উচ্চঝুঁকি অথবা সম্পদের মান ও প্রবৃদ্ধির দুর্বলতা কিংবা অন্য কোনো কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেলে সাধারণত সম্পদমূল্যের বিপরীতে তুলনামূলক কম দরে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বর্তমানে পাঁচটি খাতের গড় শেয়ারদর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর গড় সম্পদমূল্যের নিচে। খাতগুলো হলো— ব্যাংক, সাধারণ বীমা, কাগজ-মুদ্রণ, বস্ত্র এবং ভ্রমণ-অবকাশ।

বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাইস টু বুক ভ্যালু রেশিওর (পিবি অনুপাত) সাহায্যে কোনো কোম্পানির শেয়ারের সম্পদমূল্যের কী অনুপাতে কেনাবেচা হচ্ছে, তা অনুধাবন করা যায়। সম্ভাবনাময় কোম্পানির শেয়ারের সম্পদমূল্যের কয়েক গুণ দামে কেনাবেচা হলেও শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা মুনাফায় থাকেন। এক্ষেত্রে অনুপাতটি বড় হয়।

বিপরীতে অনেক কোম্পানি রয়েছে, যাদের সম্পদ অনেক, কিন্তু এর সদ্ব্যবহারের অভাবে কোম্পানিগুলোর আয়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না। এছাড়া অনেক কোম্পানির ঝুঁকি বেশি থাকায়, অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা-ব্যবস্থাপকদের ওপর আস্থা কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা এর শেয়ারের জন্য যথেষ্ট দাম দিতে প্রস্তুত থাকেন না।

এক্ষেত্রে কোম্পানির পিবি অনুপাত তুলনামূলক কম হয়। শেয়ারের বাজারমূল্য সম্পদমূল্যের নিচে নেমে এলে অনুপাতটি ১-এর কম থাকে। ডিএসইর খাতভিত্তিক বাজারচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক, সাধারণ বীমা, কাগজ-মুদ্রণ, বস্ত্র ও ভ্রমণ-অবকাশ প্রতিটি খাতেরই পিবি অনুপাত ১-এর নিচে।

এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে মোট ৩০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এ খাতের গড় পিবি অনুপাত দশমিক ৮১। সর্বশেষ চার প্রান্তিকের গড় মুনাফার ওপর ভিত্তি করে নির্ণীত ট্রেইলিং (চলমান) মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ৬ দশমিক ৩। বাজার-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের নানা ঝুঁকির ব্যাপারে একটি সতর্কতা কাজ করছে।

এদিকে বীমা খাতে চলমান তীব্র প্রতিযোগিতা ও সুশাসনের দুর্বল চর্চায় বীমা খাতের কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে নিম্নমুখী রয়েছে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর, বিশেষ করে সাধারণ বীমা।

দেশের শেয়ারবাজারে এখন পর্যন্ত ৩৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। কোম্পানিগুলোর গড় ট্রেইলিং পিই এখন ১০ দশমিক ৩, পিবি অনুপাত দশমিক ৮৮। মূলধন ঘন বস্ত্র খাতের বাজার মূলধনও এখন এ খাতের নিট সম্পদমূল্যের নিচে। এ খাতের ৪৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির গড় ট্রেইলিং পিই ১২ দশমিক ৬ ও পিবি অনুপাত দশমিক ৯৭।

আরেক বিনিয়োগঘন খাত ভ্রমণ-অবকাশের গড় পিবি দশমিক ৫২। ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে এ খাতের সবচেয়ে বড় কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে, যা গড় পিবি কমাতে ভূমিকা রেখেছে। এ খাতে দেশের শেয়ারবাজারে চারটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। কাগজ ও মুদ্রণ খাতে দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। গড় পিবি অনুপাত দশমিক ৮৮ হলেও গড় ট্রেইলিং পিই ২৩ দশমিক ৯।

সপ্তাহের বাজারচিত্র: গেল সপ্তাহে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের সিংহভাগ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। নিম্নমুখী ছিল সব সূচক। ডিএসইতে লেনদেনের দৈনিক গড় আগের সপ্তাহের চেয়ে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৩৪৫ কোটি টাকায় নেমে আসে।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক সপ্তাহে দশমিক ৬১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪১৯ পয়েন্টে। ১ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে স্টক এক্সচেঞ্জটির ব্লুচিপ সূচক ডিএসই ৩০। ডিএসইতে ৭৯টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে সপ্তাহ শেষে দর হারিয়েছে ২১৯টি সিকিউরিটিজ।

দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ব্রড ইনডেক্স সিএসসিএক্স দশমিক ৬৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২৭৪ এর ঘরে। সিএসই ৩০ সূচকটি দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। সিএসইতে ৭৬টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৭০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারদর। খাতভিত্তিক দরচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে খাদ্য-আনুষঙ্গিক, ব্যাংক, পাট ও প্রকৌশল ছাড়া সব খাতের বাজার মূলধন কমেছে।