stockholderশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আজ সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসেও সুচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বাজেট পরবর্তী বাজার নিয়ে দু:চিন্তায় পড়েছেন লাখো বিনিয়োগকারীরা। তারা বর্তমান বাজার নিয়ে এক প্রকার অস্থিরতায় ভুগছেন। বিনিয়োগকারীরা বাজেটের আগে অনেক আশা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন। তাদের সে আশায় এখন গুড়োবালি। ফলে নতুন করে দরপতনে মুল পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা রক্ষক না ভক্ষক। তিনি কি আদৌ চান পুঁজিবাজার ভাল হোক। এ প্রশ্ন এখন লাখো বিনিয়োগকারীদের। এদিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হছে মাত্র ২৮২ কোটি টাকা। একদিকে তারল্য সংকট অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিস্ক্রিয়তা দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে কোনো ধরনের প্রনোদনা না থাকায় বিনিয়োগকারীসহ স্টেকহোল্ডারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। যার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে। এছাড়াও বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিস্ক্রিয় রয়েছে।

তবে এখনো স্টেকহোল্ডারসহ বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা করছে বাজেট পাশের আগে সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনাগুলো মেনে নেবে। তাহলে বাজারে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে বিনিয়োগকারীদের, চাঙ্গা হবে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার নিয়ে স্বপ্ন দেখবে লাখো বিনিয়োগকারী।

এ ছাড়া অন্যান্য দাবিগুলো হলো : করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজড শেয়ার হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি হতে অব্যাহতি দেয়া, ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৪ এর সেকশন ২ এর সাবসেকশন (৩৫) এর অধীনে আয়বর্ষের সংজ্ঞা পরিবর্তন করার প্রস্তাব পুনরায় বিবেচনা করা।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে পাঁচ বছর শতভাগ কর থেকে অব্যাহতি সুবিধা অপরটি স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর (ধারা ৫৩ বিবিবি) উৎসে কর শূন্য দশমিক শূণ্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূণ্য ১৫ শতাংশ করা।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারেরর কাঠামোগত অনেক সংস্কার হয়েছে, যা বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আসনে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ডিএসইর দেয়া প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করা দরকার।

সিএসই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন,  ‘সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল করতে হবে। একারণে কয়েকটি প্রস্তাব বিবেচনার দাবি জানান তিনি। এর মধ্যে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী স্থিতিশীলতা ও আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সুস্পষ্ট প্রণোদনা দেয়া, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী ৫ বছরের কর সুবিধা প্রদান, উৎসে কর কমানো, লভ্যাংশের ওপর দ্বৈতকর নীতি পরিহার করা। বাজারের ক্রান্তিকাল দুর করতে বিশেষ প্রণোদনার প্রয়োজন রয়েছে। সেটা স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘ মেয়াদী হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চিুক এক সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে কোনো ধরনের প্রনোদনা না থাকায় স্টেকহোল্ডারদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই বাজার উন্নয়নের স্বার্থ  স্টেকহোল্ডারদের দাবী মেনে নেওয়ার আহবান।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মতিয়র রহমান বলেন, প্রতিনিয়তই দেশের পুঁজিবাজার ধ্বংস স্তুপে পরিণত হচ্ছে। অথচ সে ব্যাপারে বর্তমান সরকারের সামান্যতম মাথা ব্যথা নেই। এবারের বাজেট সবচেয়ে বড় বাজেট। অথচ এই বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কিছুই রাখা হয়নি। টেক্সটাইল খাতের করপোরেট ট্যাক্স কমানো হলেও এক্সপোর্টের উপর ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ যে লাউ সেই কদু।

জামাল হোসেন নামের আর এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সরকারকে ৫টি প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, একটি প্রস্তাবও বাজেটে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। যার প্রভাব ইতোমধ্যেই ডিএসইতে পড়তে শুরু করেছে।

জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, বাজেটের পাশাপাশি আসন্ন রমজানের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ডিএসইতে। রমজান উপলক্ষ্যে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছে না। আর যাদের বিনিয়োগ রয়েছে তারাও শেয়ার বিক্রি করে দ্রুতই মার্কেট ত্যাগ করছেন।