up trendশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেট কে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনার শেষ নেই। কেমন যাবে পুঁজিবাজার এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা রয়েছে দোটানায়। কেউ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট কিছুটা হলেও বিনিয়োগ বান্ধব। আবার কেউ বলেছেন এ বাজেট বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন প্রনোদনা নেই। তবে তিন ইস্যুতে বাজার স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

এদিকে  ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর আগের অর্থবছরের (২০১৫-২০১৬) সংশোধিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য এক হাজার ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারের এ বরাদ্দকে তীব্র সমালোচনা করেছে সিপিডি।

সিপিডির বাজেট মূল্যায়নে, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের জন্য নতুন করে অর্থ বরাদ্দের সমালোচনা করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা এবং রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অথচ আর্থিক খাতের এ দুটি ক্ষেত্রই খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। সেখানে বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া সৎ করদাতাদের অর্থ দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। এ প্রসঙ্গে সিপিডি’র ফেলো দেবোপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার পুঁজিবাজারের জন্য ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। কিন্তু সরকার এতো টাকা পুঁজিবাজারের জন্য বরাদ্দ রেখেছে কেন?

তিনি সরকারের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, পুঁজিবাজারের প্রতি এতো টাকা বরাদ্দের উদ্দেশ্য কি বাজারকে ঝাঁকুনি (ভাইব্রেন্ট) দেয়ার জন্য অথবা ফের বাজার থেকে টাকা লুটে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া?

মার্জিন ঋণ ও সুদ মওকুফ: তাছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মার্জিন ঋণ ও সুদ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মওকুফ জনিত সুবিধার আওতায় করযোগ্যতা থেকে সকল ক্ষুদ্র বিনিয়েঅগকারীকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করেন। এছাড়া এটা বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন ঋণ ও সুদ মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন কালে এ তথ্য জানান।

budget sharebazerবাজেট বক্তব্যের লিখিত অংশের ১৮৭ অনুচ্ছেদে তিনি বলেছেন, অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সহায়তার জন্য মার্জিন ঋণ ও সুদ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মওকুফজনিত সুবিধার আওতায় করযোগ্যতা থেকে সকল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

টেক্সটাইল খাত: টেক্সটাইল খাতের জন্য এবারের বাজেটে দারুন সুখবর শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন কালে তিনি বলেছেন, টেক্সটাইল খাতের উপখাতকে কর প্রনোদনা দেয়ার লক্ষ্যে এ খাতে কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবে না।

তিনি তার বক্তৃতায় বলেছেন, টেক্সটাইলের গ্রে কাপড়, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও ক্যালেন্ডারিং সেবা খাতকে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। ধারনা করা হচ্ছে তার এই ঘোষণার ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত টেক্সটাইল খাতের অন্তত ৪৪টি কোম্পানির উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন যার ফলাফল ভোগ করবেন শেয়ার হোল্ডাররাও।

budget lago 1এছাড়া বস্ত্র খাতকে একটি বড় ও শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাত হিসেবে আরও এগিয়ে নিতে এবারের বাজেটে কর রেয়াতের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে কেমিক্যালের কর ২৫ হতে ১৫ শতাংশ এবং কাঁচামালের কর ১০ হতে ৫ শতাংশে ধার্যের প্রস্তাব করেছেন। বস্ত্র খাতে এর প্রভাব কিছুটা হলো প্রড়বে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যদিও কোন সুখবর নেই। তার মধ্যে যদিও সরকার প্রদত্ত সব সহযোগিতা সাহায্য কোম্পানিগুলোই ভোগ করে যার তেমন কিছুই পায় না বিনিয়োগকারীরা, তারপরও বাজেটের এই ঘোষণায় একটু হলেও পুঁজিবাজারের খাতটি চাঙ্গা হবে।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করছেন, তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, দেশের শিল্পায়নের কথা বিবেচনা করে সরকার বরাবরই এই খাতটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এবারের বাজেটে এই গুরুত্বের সীমা আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের মুলধনী পন্যে ব্যাপক শুল্ক ও কর অব্যাহতি/রেয়াতের সুযোগ দিয়েছি। এই খাতের জন্য সেই সুযোগ এ অর্থ বছরেও বহাল থাকবে।

abul mal mouthitপাশাপাশি বায়োগ্যাস প্লান্টের উপকরন, স্টোভ,এয়ার টাইট স্টোরেজ ব্যাগ উইথ জিপার, বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার, প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবারের তৈরী গ্যাস সিলিন্ডারের আমদানী শুল্ক-কর হ্রাস করে রেয়াতি হারে শুল্ক ধার্যের প্রস্তাব করছি।

মন্ত্রীর এই প্রস্তাবনার ফলে আশা করা হচ্ছে অন্যান্য কোম্পানির পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত এ খাতের ১৯টি কোম্পানি বেশ লাভবান হবে। এ খাতে যেসব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন তারা কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।

এছাড়া কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামীতেও কালো টাকার সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে কালো সাদা করা যাবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, এ সরকার যতদিন থাকবে; ততদিন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ উঠছে না। এ সুযোগ বলবৎ থাকবে। যেকোনো সময় কালো টাকা জরিমানা দিয়ে বৈধ করা যাবে। এটা ও পুঁজিবাজারের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। প্রতিবার বাজেটের পর এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন কারণ নেই।

জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার স্থায়ী ব্যবস্থা দু’বছর আগেই করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত থাকবে। এটা পরিবর্তন করা হবে না। তবে শর্তহীনভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’

প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী এ্যাড. মাহামুদুল আলম ফেরদৌস বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য সত্যিকার অর্থেই তেমন কিছু নেই। তার মধ্যে মার্জিন ঋণ ও সুদ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মওকুফ জনিত সুবিধার আওতায় করযোগ্যতা থেকে সকল ক্ষুদ্র বিনিয়েঅগকারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা ঘোষণায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

স্টক বন্ডের বিনিয়োগকারী আরাফাত হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল নেই। তবুও বাজার স্থিতিশীল থাকার আশা করছি। কারন আমরা দীর্ঘ ধরে একটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য অপেক্ষা করছি।  এছাড়া ছাড়া বড় বড় সংঘটনগুলো বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে সরাসরি বৈঠক করে। কিন্তু দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ এনবিআর চেয়্যারম্যানের হাতে বাজেট প্রস্তাবনা জমা দেয়। ফলে, ঘোষিত বাজেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার তেমন কোন ফল দেখা যায়নি।

বিনিয়াগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশীদ চৌধুরী বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার ইস্যুতে তেমন কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধন আসেনি। ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোন সম্ভবনা নেই। পক্ষান্তরে মার্জিন ঋণ ও সুদ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মওকুফজনিত সুবিধার আওতায় করযোগ্যতা থেকে সকল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ডিএসইর জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট কতটা পুঁজিবাজার বান্ধব তা বাজার শুরু হলে বুঝা যাবে। পুঁজিবাজারের এই অবস্থায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কোনো চাহিদার প্রতিফলন এই বাজেটে হয়নি। পুঁজিবাজারের জন্য এই বাজেটে কিছু নেই। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে আরও তিন বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা চেয়ে আসছিল ডিএসই সিএসই।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, একটি ছোট বিষয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে তার কোনো প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বে বলে মনে হয় না

পুঁজিবাজারের মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফ হলে তাকে মুনাফা হিসেবে ধরা হত, এখন এই সুবিধা থেকে প্রাপ্ত অর্থ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় মুহিত পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এর আগে নেওয়া পদেক্ষপের ফিরিস্তি দিয়ে বলেছেন, “গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে আইন-কানুনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।