budget sharebazerশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করছেন, তার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে স্মরনকালের ধ্বস কাটিয়ে এখনো বিনিয়োগকারীরা উঠতে পারেননি।

ছয় বছরেরও সময় ধরে শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। টানা দর পতনে ইতোমধ্যে অসংখ্য বিনিয়োগকারী সব হারিয়ে বাজার থেকে ছিটকে পড়েছেন। ছয় বছরের ব্যবধানে লেনদেন নেমে এসেছে দশ ভাগের এক ভাগে। এ বাজারে প্রণোদনা দেওয়ার জন্যে বিশেষ কোনো প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবু তিনি চাঙ্গা বাজারের স্বপ্ন দেখছেন।

তার সরকারের নেওয়া নানা ব্যবস্থার কারণে শেয়ারবাজার এবার জেগে উঠবে বলে মনে করেন তিনি। তবে এবারের বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টেক্সটাইল খাতের জন্য এবারের বাজেটে দারুন সুখবর শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন কালে তিনি বলেছেন, টেক্সটাইল খাতের উপখাতকে কর প্রনোদনা দেয়ার লক্ষ্যে এ খাতে কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবেনা।

তিনি তার বক্তৃতায় বলেছেন, টেক্সটাইলের গ্রে কাপড়, প্রিন্টিং, ফিনিশিং ও ক্যালেন্ডারিং সেবা খাতকে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি। ধারনা করা হচ্ছে তার এই ঘোষণার ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত টেক্সটাইল খাতের অন্তত ৪৪টি কোম্পানির উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন যার ফলাফল ভোগ করবেন শেয়ার হোল্ডাররাও।

এছাড়া বস্ত্র খাতকে একটি বড় ও শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাত হিসেবে আরও এগিয়ে নিতে এবারের বাজেটে কর রেয়াতের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে কেমিক্যালের কর ২৫ হতে ১৫ শতাংশ এবং কাঁচামালের কর ১০ হতে ৫ শতাংশে ধার্যের প্রস্তাব করেছেন।

এ বিষয়ে বাজেট ঘোষণার পরপরই ভিএফএস থ্রেড ডায়িং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি)এম আজহার রহমানের কাছে তাদের কি ধরনের উপকার হবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যারা ১০০% এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টটেড কারখানা আছে তারা আগে থেকেই এই সুবিধা ভোগ করছি। বাজেটে এ ঘোষণা দেয়ায় এখন যারা লোকাল প্রোডাকশনে আছে তারাও এই সুবিধা ভোগ করবে এবং এ থাতের বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবে।

আর বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সভাপতি মিজান-উর রশিদ চৌধুরী টেক্সটাইল খাতকে এই প্রনোদনা দেয়ায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, যদিও সরকার প্রদত্ত সব সহযোগিতা সাহায্য কোম্পানিগুলোই ভোগ করে যার তেমন কিছুই পায়না বিনিয়োগকারীরা, তারপরও বাজেটের এই ঘোষণায় একটু হলেও শেয়ার বাজারের এই খাতটি চাঙ্গা হবে।

budget lago 1অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, দেশের শিল্পায়নের কথা বিবেচনা করে সরকার বরাবরই এই খাতটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এবারের বাজেটে এই গুরুত্বের সীমা আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের মুলধনী পন্যে ব্যাপক শুল্ক ও কর অব্যাহতি/রেয়াতের সুযোগ দিয়েছি। এই খাতের জন্য সেই সুযোগ এ অর্থ বছরেও বহাল থাকবে।

পাশাপাশি বায়োগ্যাস প্লান্টের উপকরন, স্টোভ,এয়ার টাইট স্টোরেজ ব্যাগ উইথ জিপার, বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার, প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবারের তৈরী গ্যাস সিলিন্ডারের আমদানী শুল্ক-কর হ্রাস করে রেয়াতি হারে শুল্ক ধার্যের প্রস্তাব করছি।

তবে সরকারের এই প্রস্তাবনার ফলে আশা করা হচ্ছে অন্যান্য কোম্পানির পাশাপাশি বিদ্যুৎ জ্বালানী ও ব্স্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো বেশ লাভবান হবে। এ খাতে যেসব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন তারা কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সেক্রেটারী কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খাত ভিত্তিক যে সুযোগ সুবিধা এবারের বাজেটে সরকার দিয়েছে তাতে কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এতে বিনিয়োগ করা শেয়ার হোল্ডারগনও উপকৃত হবেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, “আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হবে এ খবরে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়েছেন। তবে বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব না হলে বিনিয়োগকারীরা নিরাশ হবেন। এছাড়া তবে এবারের বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর প্রভাব বাজারে প্রভাব বলে তিনি মনে করেন।

পাশাপাশি বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত ও মার্জিন ঋণগ্রহিতা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফজনিত কর থেকে অব্যাহতি প্রদান ছাড়া আর কোনো সুবিধার প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী। তার এ প্রস্তাবের ফলে বিনিয়োগকারীরা কিভাবে লাভবান হবেন তা-ও স্পষ্ট নয়। তবু বাজার নিয়ে উচ্চাশা অর্থমন্ত্রীর।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের শেয়ারবাজার এখন নিয়মমাফিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং স্থিতিশীলতা এসেছে। একই সঙ্গে ফটকাবাজির (কারসাজিমূলক লেনদেন) অবসান এবং নির্মূল হয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজার এবার জেগে উঠবে।

শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা, সিকিউরিটিজ আইন প্রতিপালন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানা সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন ঋণ ও সুদ মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ জুন) সংসদে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন কালে এ তথ্য জানান। তার এ প্রস্তাবের ফলে বিনিয়োগকারীরা কিভাবে লাভবান হবেন তা-ও স্পষ্ট নয়।

বাজেট প্রস্তাবনায় তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে বলেন, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা, সিকিউরিটিজ আইন প্রতিপালন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।