foodশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৫ কোম্পানি অথাৎ ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর দীর্ঘদিন ধরে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। তারা আদৌ পুঁজি ফিরে পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন। এসব কোম্পানি বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। তেমনি বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব ব্যাপারে কোন ভুমিকা নিচ্ছে না।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের এসব কোম্পানিই স্বল্পমূলধনী ও পুঞ্জীভূত লোকসানি কোম্পানি। একদিকে কোম্পানিগুলোর টানা লোকসান অন্যদিকে শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হওয়ায় লোকসানে জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন পেরুলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ফেসভ্যালুতে ফিরে আসতে পারেনি। তাই পুঁজি আটকে থাকার কারণেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারকে নিয়ে ভুগছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এদিকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান করছে কোম্পানিগুলো। ফলে বছর শেষেও ডিভিডেন্ড বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ১৮টি কোম্পানির মধ্যে ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ বা ৫টির শেয়ার দর বর্তমানে ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো ফাইন ফুডস, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট, শ্যামপুর সুগার মিল ও জিলবাংলা সুগার মিল।

fine food grapডিএসই সূত্রে জানা গেছে, স্বল্পমূলধনী ও পুঞ্জীভূত লোকসানি কোম্পানির ফাইন ফুডসের শেয়ার দর গেল ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর শেয়ারটির দর সর্বশেষ ১০ টাকা বা অভিহিত মূল্যে লেনদেন হয়েছিল। পরবর্তীতে দর আরো কমে ফেসভ্যালুর নিচে নেমে যায়। সেই থেকে আজ অবধি এ শেয়ারটি ফেসভ্যালুতে ফিরতে পারেনি।fine food rate

সর্বশেষ কার্যদিবসে বৃহস্পিতিবার শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। এ দিন কোম্পানিটির ৩৪ হাজার ৪৫৭টি শেয়ার মোট ৩২ বার হাতবদল হয়েছে। গেল দুই বছরে কোম্পানিটির সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা কোনো ডিভিডেন্ড পায়নি। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি লোকসান করেছে ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এ কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান ২৭ লাখ টাকা।

maghna grapএদিকে গেল দুই বছর ধরে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কোম্পানির শেয়ার দর। আলোচ্য সময়ে স্বল্পমূলধনী ও পুঞ্জীভূত লোকসানি এ কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৯ টাকা ৯০ পয়সায় উঠলেও সর্বশেষ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৭ টাকা দরে।

এ দিন ৯ হাজার ৭৫০টি শেয়ার মাত্র ১১ বার হাতবদল হয়েছে। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে ২০১১ সাল থেকে ডিভিডেন্ড বঞ্চিত হয়ে আসছে কোম্পানির সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। maghna condens milkসর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরেও কোম্পানিটি ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা লোকসান করেছে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ১২ লাখ টাকা।

এ খাতের মেঘনা পেট কোম্পানির শেয়ার দরও গত দুই বছর ধরে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে লোকসানি এ কোম্পানিটির লেনদেন না হলেও আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫ টাকা ২০ পয়সা দরে। ২০১১ সাল থেকে কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান করায় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এ কোম্পানিটি সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা লোকসান করেছে। স্বল্পমূলধনী এ কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

sampursugerদীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা স্বল্প মূলধনী শ্যামপুর সুগার মিল কোম্পানির শেয়ার দর গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফেসভ্যালুর নিচে লেনদেন হচ্ছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা দরে। আলোচ্য দিনে ৬ হাজার ৪৪০টি শেয়ার মাত্র ১৫ বার হাতবদল হয়েছে।

এদিকে ২০১১ সাল থেকে টানা লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি। এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীরাও কোনো ডিভিডেন্ড পায়নি। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি লোকসান করেছে ৩৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এ কোম্পানিটির বর্তমানে পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায়।

zillbangla rateএছাড়া জিলবাংলা সুগার মিলের শেয়ার দরও দুই বছর ধরে ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। আগের কার্যদিবসের তুলনায় সর্বশেষ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ বা শূন্য দশমিক ৪০ পয়সা বেড়ে সর্বশেষ ৯ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

আলোচ্য দিনে ৭ হাজার ৮০০ শেয়ার মাত্র ৮ বার লেনদেন হয়েছে। এ কোম্পানিটি ২০১১ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে এবং সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরেও লোকসান করেছে ৩৪ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। লোকসানের ধারাবাহিকতায় গেল ৫ বছর ধরে ডিভিডেন্ড বঞ্চিত হয়ে আসছে বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা এ কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান ২০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

zillbangla grapএকাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেছেন, স্বল্পমূলধনী কোম্পানি নিয়ে কারসাজির প্রবণতাসহ ধারাবাহিকভাবে লোকসানে জড়িয়ে পড়ার কারণেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তলানিতে নেমেছে। বহুদিন ধরেই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে বাইব্যাক আইন প্রণীত হলে বিনিয়োগকারীরা ফেসভ্যালুতে শেয়ার ফেরত দেয়ার সুযোগ পাবে।