বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে যাচ্ছে!
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পিডিবির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৫শ মিলিয়ন ডলার বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের অন্য কোম্পানিগুলোকে সিঙ্গাপুরের পুঁজিবাজারে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য অর্থনৈতিক পরামর্শক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে বিদেশের মার্কেটে বন্ড ইস্যু শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। সভায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যুত্ কোম্পানিও বিদেশের বাজারে বন্ড ছাড়ার কথা জানায়।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারের পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। দাতা গোষ্ঠীর ঋণের জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এ জন্য দেশের পুঁজিবাজারের পাশাপাশি বিদেশেও অর্থের উত্স খুঁজতে হবে।
আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে পিডিবি ৫০ কোটি ডলারের বন্ড ইস্যু করবে। এ অর্থ পিডিবি নিজের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে। চাইলে অন্য কোম্পানির মাধ্যমেও বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে সফল হলে ধীরে ধীরে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতের অন্য কোম্পানিগুলোও বন্ড ছাড়বে। প্রয়োজন হলে সরকার বিনিয়োগকারীদের সার্বভৌম গ্যারান্টি দিবে।
বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে এক সেকেন্ডের লোডশেডিংও আমরা চাই না। রপ্তানি ঋণ সহায়তায় (ইসিএ) অর্থায়ন বা দাতা সংস্থা থেকে অর্থ নিয়ে কাজ করতে অনেক সময় লেগে যায়। দুই বছর আগে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু বা শেষ করতে পারলে তা থেকে অনেক বেশি সুবিধা ও লাভ পাওয়া যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিবেচনায় স্টক মার্কেট হতে প্রয়োজনীয় অর্থ নেয়া যেতে পারে এবং প্রক্রিয়াটিও তুলনামূলকভাবে কম সময় সাপেক্ষ। বিদেশের বন্ড মার্কেটে বিদ্যুত্ কোম্পানিগুলোকে প্রবেশ করাতে পারলে এর সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা আরো বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি বাংলাদেশেরও ব্র্র্যান্ডিং হবে এবং বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
এ সময় বিদ্যুত্ সচিব মনোয়ার ইসলাম জানান, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী বিদ্যুত্ কোম্পানি মূলধন যোগাড়ে সিঙ্গাপুরের বাজারে বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম তার কোম্পানির পক্ষ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড ছাড়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুত্ উত্পাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, বিদেশের বাজার থেকে অর্থ এনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও জনগণের কল্যাণে আমাদের এমন অনেক প্রকল্প নিতে হয় যেগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়। এছাড়া বিদ্যুতের উত্পাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে একটা বড় ব্যবধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে এ ধরনের বিনিয়োগ অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে।
এ বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের কোম্পানিগুলোকে আরো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। শুধু বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খরচ কমাতে হবে। কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। সিস্টেম লস কমাতে হবে।
বিদ্যুত্ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিডিবির চেয়ারম্যান মো. শামসুল হাসান মিয়া, ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদ সারওয়ার, পিজিসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আল বেরুনী, ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম জহিরুল মজুমদার প্রমুখ।