টানা দরপতন নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহজুড়ে উত্তাল পাতাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে মিশ্র প্রিতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে কারসাজির বাজারের লক্ষণ বলে মনে করছেন।
কারন টানা দরপতন বাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়লে ও ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর বাড়ছে না। এর পেছনে কোন কারন আছে বলে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট শেয়ার বিক্রিচাপ সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিসহায়তার ঘোষণা দেয়। এতে আগের সপ্তাহে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখা যায় পুঁজিবাজারে। ফলে সূচকে বাড়তি পয়েন্টও যোগ হয়।
তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার মন্দার প্রভাব পড়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় লেনদেন কমে গেছে ১০ শতাংশ। সমাপ্ত সপ্তাহের শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচকে যে পয়েন্ট যোগ হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তা হারাতে হয়েছে।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ মে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো শেয়ার বিক্রি করতে হবে না, মর্মে নীতিসহায়তার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। শেয়ারবাজারে বর্তমানে ১০টি ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে সামান্য বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তা সমন্বয়ের জন্য কোনো শেয়ার বিক্রি ছাড়াই কেস টু কেস ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করার কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এপ্রিলের শেষার্ধে এ নীতিসহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই ২ মে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। চলতি সপ্তাহের ৮ মে পর্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতায় ছিল বাজার পরিস্থিতি। অবশ্য এর পর থেকেই বাজারে আবারো ধীরগতি তৈরি হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সমাপ্ত সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে প্রধান মূল্যসূচকটিতে ৩৩ পয়েন্ট যোগ হয়। এতে ডিএসইএক্স সূচক ৪৩৪০ পয়েন্টে উন্নীত হয়। তবে এর পর সতর্ক বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস ও মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় বাজারে শেয়ার বিক্রিচাপ কিছুটা বাড়ে।
এ কারণে সমাপ্ত সপ্তাহের অবশিষ্ট কার্যদিবসগুলোয় সূচক কমে ৪২৯৮ পয়েন্টে নেমে আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তার ঘোষণার কারণে বাজারে যে ঊর্ধ্বগতির আশা বিনিয়োগকারীরা করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত বাজারচিত্রে কিছুটা নিরাশ হয়েছেন তারা। অবশ্য বাজারচিত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা কেউই স্পষ্ট করে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয় অবস্থাকেই দায়ী করেছেন তারা।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তারা মনে করেন, মার্চেন্ট ব্যাংক ও শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অধিকাংশের মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়ায় শেয়ারবাজারে তাদের অংশগ্রহণ কমে গেছে, যা কাঙ্ক্ষিত লেনদেন না হওয়ার অন্যতম কারণ। এর বাইরে ব্যক্তিশ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সাইড লাইনে চলে যাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা।
সদ্য সপ্তাহে ডিএসইতে গড় লেনদেন হয়েছে ৪৩৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা চলতি সপ্তাহে ৩৯১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। লেনদেনের প্রায় ২৫ শতাংশ এসেছে জ্বালানি খাত থেকে। দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।
ডিএসইর খাতওয়ারি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সমাপ্ত সপ্তাহে বাজারে কিছুটা মন্দাভাব থাকলেও বড় ধরনের কোনো ওঠানামা দেখা যায়নি। এ সময়ে বেশির ভাগ খাতের বাজার মূলধনও সামান্য বেড়েছে। তবে ব্যাংক ও ওষুধ খাতের দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি চলতি সপ্তাহে ৮ পয়েন্ট হারিয়েছে।
এ সপ্তাহে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিযোগাযোগ ও প্রকৌশল খাতের বাজার মূলধন শূন্য দশমিক ৮৯ থেকে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে ব্যাংক ও ওষুধ খাত যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ দর হারিয়েছে।