ডেসকোর লোকসানে যাওয়ার পেছনে রয়েছে তিন কারন!
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) লোকসানে যাওয়ার পেছনে রয়েছে তিন কারন। হঠাৎ কোম্পানিটি খুচরা মূল্যের তুলনায় পাইকারি (বাল্ক) পর্যায়ে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় চাপের মুখে রয়েছে ।
পাশাপাশি হুইলিং (সঞ্চালন) চার্জও বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসানের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রত্তার কোম্পানিটি। এ সময় স্থায়ী আমানতের বিপরীতে সুদ বাবদ আয় কমে যাওয়ায় আর্থিক পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সম্প্রতি প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে আসে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ডেসকোর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৪ পয়সা। অথচ আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৭৭ পয়সা।
২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সরকার পাইকারি ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ায়। এ সময় আবাসিক ও বাণিজ্যিক শ্রেণীর গ্রাহকভেদে ডেসকোর বিদ্যুতের মূল্য দশমিক ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর মধ্যে আবাসিকে সর্বোচ্চ ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর জন্য ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এর বাইরে আবাসিকের অন্য গ্রাহকদের জন্য সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৮৭ ও শিল্পে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।
বিপরীতে ডেসকোকে পাইকারি পর্যায়ে ৬ দশমিক ৭৬ থেকে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি মূল্যে বিদ্যুত্ কিনতে হচ্ছে। এ সময় বিদ্যুতের সঞ্চালন চার্জ আগের চেয়ে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে পরিচালন পর্যায়েই লোকসানের মুখে পড়েছে ডেসকো।
চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের ব্যবহার ও দাম বাড়ায় ডেসকোর রেভিনিউ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে বিদ্যুত্ বিক্রি ও অন্যান্য আয় থেকে ডেসকোর মোট রেভিনিউ ছিল ৬৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এ সময়ে সঞ্চালন চার্জসহ বিদ্যুৎ কেনায় খরচ হয়েছে ৬১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যা বিদ্যুত্ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ৯৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অথচ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে বিক্রির ৯০ দশমিক ৫৭ শতাংশ খরচ হচ্ছিল এ খাতে। চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে আবেদনপত্র ফি, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন, পুনঃসংযোগ, মিটার পরীক্ষাসহ অন্যান্য আয় থেকে ডেসকোর রেভিনিউ ৬৪ শতাংশ কমেছে।
বিদ্যুতের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে পরিচালন ও অবচয় খরচ যোগ করার পর চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে পরিচালন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে এ সময় বিদ্যুত্ ক্রয়-বিক্রয় থেকে ডেসকোর লোকসান হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যদিও ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে এক্ষেত্রে কোম্পানির মোট মুনাফা ছিল ২৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ প্রশাসনিক ব্যয়ও বেড়েছে। এতে লোকসানের পাল্লা আরো ভারী হয়েছে। ২০১৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রশাসনিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বাবদ খরচ ছিল ৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে ৪৭ কোটি ২৩ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ফলে এ সময়ে পরিচালন লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৩ কোটি টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে এ লোকসান ছিল ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আগের বছর সুদ বাবদ আয়ের সুবাদে কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত মুনাফায় ছিল।
তবে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সুদ বাবদ আয় ১৯ শতাংশ কমে আসায় ডেসকোর কর-পরবর্তী লোকসান দাঁড়ায় ৯ কোটি ৫১ লাখ টাকায়, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল।
অবশ্য অর্ধবার্ষিক পর্যন্ত মুনাফা থাকায় চলতি হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে ডেসকোর ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার কর-পরবর্তী মুনাফা রয়েছে। তবে তা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কম।
চলতি অর্ধবার্ষিক পর্যন্ত ডেসকোর ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৬ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকের লোকসান শেষে প্রথম নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সায়। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার একই থাকলে চলতি হিসাব বছরে ডেসকোর মুনাফা আরো কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।