bangladesh bankবিশেষ প্রতিনিধি, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে বাড়তি বিনিয়োগ বা এক্সপোজার সমন্বয়ে নীতি সহায়তার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ বা এক্সপোজার সমন্বয়ে নীতি সহায়তার ঘোষনার পর থেকে পুঁজিবাজারে দরপতন ত্বরান্বিত হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেওয়া উদ্যোগের কোন সুফল মেলেনি।

কারণ বাড়তি বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাংক স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না আসায় উল্টো বিভ্রান্তিতে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়েছে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পলিসি সার্পোট দেওয়ার ফলে অতিরিক্ত বিনিয়োগে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর শেয়ার বিক্রির প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু ঘোষণার আসার পরদিনই বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে উল্টো শেয়ার বিক্রি করছেন। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তড়িঘড়ি এই সংবাদ সম্মেলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

যার কারণে বৃহস্পতিবারে প্রধান পুঁজিবাজারের সূচক কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। তবে এটি নিয়ে বিনিয়োগকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝেও কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। এদিকে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে অস্থির হয় উঠেছে পুঁজিবাজার। আর ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীত-বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারো আতঙ্ক কাজ করছে।

অব্যাহত দরপতনের মুখে বুধবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য সময় বাড়ানো হবে না। তবে এক্সপোজারের সংজ্ঞায় পরিবর্তনসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দেয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বক্তব্য স্পষ্ট নয়। এর মাধ্যমে বাজার কার্যত কী সমর্থন পেতে যাচ্ছে তাও নিশ্চিত নয়। আর এ ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক কমে গেছে। তাই তাদের মধ্যে নতুন করে পুঁজি হারানোর ভয় কাজ করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় সবই ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। কিন্তু সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থাতেই। তাই এ সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট মহলকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত অতিরিক্ত বিনিয়োগ (এক্সপোজার) কোন প্রকার শেয়ার বিক্রয় না করে আইনী সময়সীমার মধ্যে নির্ধারিত মাত্রায় নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু নীতি সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগের (এক্সপোজার) উপাদান হিসাবের ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যাসসহ কতিপয় অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে সাবসিডিয়ারির মূলধন বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হবে। এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ব্যাংকগুলোর ওপর কোন বিক্রয় চাপ সৃষ্টি হবে না এবং এ ধরনের বিক্রয় করার কোন প্রয়োজন হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

প্রসঙ্গত, ব্যাংক কোম্পানির সংশোধিত আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ রয়েছে। সেটি সমন্বয় করতে আইন অনুযায়ী সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে নীতিগত সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে নীতি সহায়তা বলতে কী বোঝানো হয়েছে বা উপাদান পুনর্বিন্যাস থেকে কী কী উপাদান বাদ দেয়া হবে সেটিও এখন চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুই এখনও চূড়ান্ত করেনি বা কিভাবে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়ানো যায় তাও ওই সময় বলা হয়নি।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারকদের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়তার কথা বলেছে। কিন্তু একেকটি প্রতিষ্ঠানের একেকটি সমস্যা রয়েছে। তাই একটি মাত্র সিদ্ধান্তেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার নীতি সহায়তার কথা বলা হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানে একই সমস্যা নেই। তাই সমস্যা সমাধানে গড়পরতা প্রজ্ঞাপন জারি করলেই চলবে না। কেস টু কেস বেসিসে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে। দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতার জন্য যা করা দরকার সবই করা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে কোন শেয়ার বিক্রি করতে হবে না। এমনভাবে সবকিছু করা হবে যেখান থেকে সব প্রতিষ্ঠানেরই বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় আসবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরারও আহ্বান জানান। দ্রুততম সময়েই প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দেয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের এ দুর অবস্থা থেকে উন্নয়নে প্রথম কাজ হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের সমন্বয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুনেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সার্কুলার জারি করেনি। তবে এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট ধারনা দেওয়া উচিত।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বাজারের মূল্য সূচক প্রায় ৪ হাজারে চলে এসেছে। এর মূল কারণ অনিয়ম আর নানা অপকৌশলে বাজার থেকে অর্থ বেড়িয়ে যাচ্ছে। রেগুলেটরের ব্যর্থতায় বোনাস শেয়ার ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মধ্যমে শেয়ারবাজারের থেকে শত শত কোটি টাকা বাহিরে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে এক্সপোজার নিয়েও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন কেম্পানির অস্বাভাবিক দর উঠানামার কারণে বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে রেগুলেটরদের কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা দেখছি না। ফলে বাজারে ধারাবাহিক দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।