bsec-aciশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার চলছে টালমাতাল পরিস্থিতি, কিছুতেই দরপতন থামছে না। আর এ দরপতন বাজারে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। শেয়ারবাজারে গত কয়েকদিন ধরে চলছে নেতিবাচক প্রবণতা। আর এ মন্দা বাজারেও অস্বাভাবিক ওঠানামা করছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত এসিআই লিমিটেডের শেয়ার দর বৃহস্পতিবার ওপেন প্রাইজ ৫৮০ টাকা থাকলেও তার সর্বনিম্ন দর ছিল ৫৬ টাকা।

স্বাভাবিক দরের চেয়ে অনেক নিচে শেয়ার বেচাকেনা হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়। সেই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এসিআই কোম্পানির শেয়ার দর। তবে বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী কোনো কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর দিন প্রাইজ লিমিটেডের কোনো ধরনের সীমা থাকে না। তবুও কেউ সহজে তার হাতে থাকা শেয়ার লোকসান দিয়ে বিক্রি করবে না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এসিআইর শেয়ারের বেলায় দেখা গেছে ভিন্ন রকমের চিত্র।

কোম্পানির শেয়ার যখন বাজারে ওপেন প্রাইজ ৫৮০ টাকায় ছিল তখন দিনের সর্বনিম্ন ৫৬ টাকা দরে বেচাকেনা হয়। আর এটাকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে বাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর প্রাইজ লিমিট না থাকলে তা ওঠানামা করবে স্বাভাবিক মাত্রায়। কিন্তু এসিআইর শেয়ার সর্বনিম্ন যে দরে বিক্রি করা হয়েছে তাতে বুঝা যাচ্ছে যে কেউ এটা উদ্দেশ্য নিয়ে করেছে। তবে উদ্দেশ্য নিয়ে করলেও তা ডিএসইসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার খুঁজে বের করা উচিত। তা না হলে বাজারে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হবে। যার ফলে বাজারে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।

ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার এসিআইয়ের শেয়ারের লেনদেন শুরুতে (ওপেন প্রাইজ) দর ছিল ৫৮০ টাকা এবং সর্বশেষ লেনদেন (লাস্ট ট্রেডিং প্রাইজ) ছিল ৫২৫ টাকায়। বৃহস্পতিবার শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ৫৮৫ টাকায় এবং সর্বনিম্ন শেয়ারটি লেনদেন হয় ৫৬ টাকায়। এর আগে গত ৫২ সপ্তাহে শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৪৫০ থেকে ৬৬৫ টাকায়।

এ সম্পর্কে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর কোনো কোম্পানির শেয়ারে প্রাইজ লিমিট সীমা থাকে না ঠিক তবে এসিআইর শেয়ার এতো কম দামে কেন বিক্রি হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখবো। যদি কোনো ধরনের ত্রুটি পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একাধিক বিনিয়াগকারীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, একের পর এক ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজি হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। আসলে বাজারে সঠিক তদারকি নেই। যদি সঠিক তদারকি থাকতো তাহলে ৫৮৫ টাকার শেয়ার কিভাবে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয় এটাই আমাদের প্রশ্ন। আমরা মনে করি বাজারের ধারাবাহিক দরপতনের মূল কারণ এটাও। এসব অনিয়মের কোনো শাস্তি না হলে বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা সংকট বাড়বে।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আসলে এসিআইর বুধবার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। অথচ আজ (বৃহস্পতিবার) কোম্পানির শেয়ার দর এতো কম দামে বিক্রি হয়েছে। তা তো ডিএসই এবং বিএসইসি তাদের সফটওয়্যারে দেখলেই ধরতে পারবে কারা এ কাজ করেছে। তবে বলতে কেউ পারে যে, এটা ভুলে করা হয়েছে। তবে ভুলে করা হলেও বিষয়টি খুঁজে বের করে আইনুযায়ী শাস্তি দেয়া উচিত।

এ সম্পর্কে এসিআই কোম্পানি শেয়ার বিভাগে যোগাযোগ করা হলে ওয়াহিদ নামের এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে কাজ করছে শেয়ার বিভাগ, এ সম্পর্কে পরে জানানো হবে।