বিচ হ্যাচারির ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় শেয়ারহোল্ডাররা
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি বিচ হ্যাচারির উৎপাদন বন্ধ থাকায় দু:চিন্তায় পড়েছেন এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা। তারা কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য টেকনাফে বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের কিছু জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার।
সপ্তাহের শুরুর দিকে হ্যাচারির মূল স্থাপনা ভাঙা পড়ায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বিচ হ্যাচারি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। শেয়ারহোল্ডার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচ হ্যাচারি জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া এলাকায় সাগরপাড়ে ৯ দশমিক ২ একর জমির ওপর তাদের হ্যাচারি।
মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য গত বছরের আগস্টে স্থানীয় জেলা প্রশাসন কোম্পানির কেনা এ জমির কিছু অংশ অধিগ্রহণের নোটিস দেয়। এতে হ্যাচারির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে মর্মে ভূমি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে তা বন্ধের আবেদন জানায় কোম্পানি, যা গৃহীত হয়নি। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত ৬৮৫ ফুট দীর্ঘ ও ১০০ ফুট চওড়া জমির ওপর কোম্পানির সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে।
এর মধ্যে রিজার্ভার ট্যাংক, ইউভি হাউজ, ওয়াটার পাম্পহাউজ, ওভারহেড ট্যাংকসহ হ্যাচারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনাও ছিল। এ কারণে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কোম্পানি। তবে পোনা উৎপাদন ও বিপণনে নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবারো উৎপাদন কর্মকাণ্ড শুরুর ঘোষণা দেয় বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
এ বিষয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হলেও আমাদের কমপক্ষে এক বছর লেগে যাবে। হ্যাচারির মূল স্থাপনার ওপর দিয়েই মেরিন ড্রাইভ হচ্ছে। এ রাস্তার কারণে হ্যাচারির জমির সিংহভাগই সাগর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এখানে মাটির নিচ দিয়ে পাইপ টেনে হ্যাচারিতে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব।
তবে মূল কিছু স্থাপনা পুনর্র্নিমাণসহ এজন্য ১০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে। বিকল্প হিসেবে আমরা সোনারপাড়া হ্যাচারি জোনে কোনো হ্যাচারি অধিগ্রহণ করে সেখানে কার্যক্রম শুরুর কথাও বিবেচনা করতে পারি। তবে সেখানে খরচ আরো বেশি হবে। প্রাথমিক হিসাব-নিকাশে দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে এক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হতে পারে। রিজার্ভার অক্ষত থাকলে সহজেই আমরা বর্তমান হ্যাচারিতে গুছিয়ে নিতে পারতাম।
২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। কোম্পানিটি চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও বিপণন করে। ২০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে বর্তমানে তাদের পরিশোধিত মূলধন ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
রিজার্ভে আছে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৪৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার।
২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয় বিচ হ্যাচারি। বছর শেষে কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ২ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে যা ছিল ৩ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার টাকা।
এদিকে ২০১৫ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ও শেয়ারপ্রতি লোকসান ৪৭ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যেখানে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৯৭ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৯১ পয়সা।