টানা ১২ দিনের দরপতনে টালমাতাল পুঁজিবাজার
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার কিছুতেই পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। বাজারে টানা দরপতনে অস্থির হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথায় কিছুতেই আস্থা রাখতে পারছে না। ২০১০ মতো বর্তমান বাজারে টানা দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এ দরপতনের শেষ কোথায়! আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে শেষ হয় লেনদেন।
এদিন শুরুতে টানা পতনের কবলে পরে বাজার এবং দেড় ঘন্টার মাথায় ঘুঁরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সূচক। মঙ্গলবার সূচকের পাশাপাশি কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার অংকে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
তবে বিক্রির চাপে এ লেনদেন বাড়ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, টানা ১২ দিনের দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রায়৬গ শতাংশ লোকসানে রয়েছে। যারা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন তারা এ লোকসানের শিকার। পুরাতন লোকসান কাটাতে না কাটাতে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের ধকল দিলে। এ ধকল সহ্য করার মতো নয় বলে তারা মনে করেন।
এছাড়া বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। আসছে বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ কতটা বাস্তবায়ন হয় তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। আর এ কারণেই বাজারমুখী হচ্ছেন না। পাশাপাশি ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ঝুলন্ত অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
আর এসব শঙ্কার কারণেই আজকের বাজারে পতন ঘটেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে এখনই কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবারের বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ৩৯.৭০ পয়েন্ট। লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৮১.৯৩ পয়েন্টে। আর টানা ৪ দিনের পতনে ডিএসই সূচক কমেছে ৭৭.৭০ পয়েন্ট। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সোমবার হয়েছিল ৩৩১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৭টি ইস্যুর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৮টির, কমেছে ১৯১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির দর।
লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বিএসআরএম লিমিটেড। এ কোম্পানির ৪০ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ারের ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মবিল যমুনা। লেনদেনে এরপর রয়েছে— ডরিন পাওয়ার, কেয়া কসমেটিকস, স্কয়ার ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, যমুনা অয়েল, অলিম্পিক, এসিআই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নামধারী এক শ্রেণীর অসাধু মহল বিভিন্ন গুজবের মাধ্যমে বাজারকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। এ কারণে বাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। কাজেই তিনি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানান, বর্তমানে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টগুলো এক প্রকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ ডে-ট্রেডারের মতো আচরণ করে সেল প্রেসার ফেলছে।
কেউ আবার সাইডলাইনে বসে আরো কমদামে শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগ থেকে দূরে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারকে যারা কারসাজির আশ্রয় নিয়ে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখে সরকারের ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।