stock marketশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ (ওভার এক্সপোজার) সমন্বয়কে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে উত্তাল অবস্থার মধ্যে চলছে। বর্তমান বাজার পতনের অন্যতম কারণ বাড়তি বিনিয়োগ (ওভার এক্সপোজার) সমন্বয়কে কেন্দ্র করে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাই নানা সময়ে ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি করেছেন।

এছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো হবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়কে ঘিরে পুঁজিবাজারে নানা গুজব চলছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে। পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহের লেনদেনও সুচকের পতনে তা প্রতিফলিত হয়েছে। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চারদিনই দরপতন হয়েছে।

চলতি বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে। অর্থমন্ত্রী সম্মতি দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সময়সীমা বাড়ানোর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় দ্বিধার মধ্যে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে কোন সাড়া দেয়নি। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অভিযোগ করেছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা আরও কয়েকবছর থাকার ব্যাপারে তিনিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান তা উপক্ষো করে সময়সীমা এক বছরে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এতে পুঁজিবাজারে দরপতন ত্বরান্বিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এ অবস্থায়  বর্তমান বাজারে গুজব রটেছে যে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো হবে না। আর এ সময়ে ব্যাংকের শেয়ার বিক্রয় চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচকেরও বড় পতনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এসব গুজব আর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগরিই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টিতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সর্বশেষ সংশোধনীর কারণে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে। আগে প্রতিটি ব্যাংক তার আমানতের ১০ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারতো। কিন্তু সংশোধনীর পর এখন ব্যাংকগুলো রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাংকের আমানত রেগুলেটরি মূলধনের চেয়ে অনেক বেশি হয়।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা খুবই করুন। এমনিতেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তাদের বাড়তি বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়ে গেছে। এ বাড়তি বিনিয়োগ ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এটি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে হবে। কিন্তু মন্দা বাজারে এ শেয়ার বিক্রি করা হলে তার চাপে বাজারে শেয়ারের দাম অনেক কমে যেতে পারে এমন আশংকায় অনেক বিনিয়োগকারী হাত গুটিয়ে বসে আছে। এতে বাজার মন্দার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একসময় ব্যাংকগুলোর আগ্রাসীভাবে শেয়ার ক্রয়ের কারণেই পুঁজিবাজার হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠে। আর বাজার চাঙ্গা হওয়ার পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে ঝুঁকেছেন।

ব্যাংকগুলো যখন আগ্রাসীভাবে শেয়ার ক্রয় করেছে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের থামাতে পারেনি। অথচ বাজারে উচ্চ দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার পর ব্যাংকের বিনিয়োগ কমানোর ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আসার সময়ই যদি তাদেরকে বাধা দেয়া হতো তাহলে পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতি হতো না। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রাসী শেয়ার ক্রয় থামাতে না পারাকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিএসইসির এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের শেষদিকে শেয়ারবাজারে ধস শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাজারে কোন আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি দেখা দেয়নি। এ প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজার ধসের কারণ খুঁজতে থাকে সরকার। পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডারর একাধিকবার জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে দরপতন হচ্ছে।

এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় চান। এ প্রস্তাব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দেন।

বিএসইসি প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। কিন্তু বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সুবিধা দিয়েছে তা হলো- ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে হিসাব না করার অনুমতি দিয়েছে।