estarn cablesশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন ক্যাবলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। স্বল্পমুলধনী কোম্পানি হওয়ার একটি চক্র নতুন করে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে মেতে উঠছেন।

ইস্টার্ন ক্যাবলসের প্রাইস আর্নিং (পিই) রেশিও কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে বর্তমানে ২৪০৩.৩৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তাই এ কোম্পানিতে বিনিয়োগে উচ্চ ঝুঁকি বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের।

আর কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ৪০-এর ওপরে উঠলেই সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগে উচ্চ ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেই শেয়ারকে ‘নন-মার্জিনেবল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ, সেই কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীরা কোনো মার্জিন ঋণ পান না।

এদিকে বর্তমান বাজারে সুচকের নিন্মমুখী প্রবনতা বিরাজ করলে ইস্টার্ন ক্যাবলের শেয়ার টানা দরবৃদ্ধি ছিল। হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়া এ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়া অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এছাড়া দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ার নিয়ে হরহামেশা কারসাজি চলছে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। ইষ্টার্ন কেবল্‌স্ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কারণ জানে না বলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) এক চিঠির জবাবে জানিয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে সিএসই কোম্পানির কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়। চিঠির জবাবে কোম্পানিটি জানিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে মূল্য সংবেদনশীল কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। আর শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কোনও কারণ তাদের জানা নেই।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার ৩৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় প্রায় ১০৭ টাকা। এরপর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর কয়েকদিন কমতে থাকে।

গত ৭ মার্চ থেকে কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। গত ১৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৪৪.২০ টাকায়। সুতরাং এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর প্রায় ৩৭ টাকা বেড়েছে। জানা গেছে, একটি চক্র ইপিএস ও ডিভিডেন্ড কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তাছাড়া গত এক বছরের ব্যবধানে এ কোম্পানির শেয়ার দর সর্বনিম্ন ১০০.১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩৯ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ছিল। চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে এ কোম্পানি প্রায় ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে টার্নওভার বেড়ে প্রায় ৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। টার্নওভার বাড়লেও কমেছে কর পরিশোধের পর মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস)।

প্রথম প্রান্তিকে কর পরিশোধের পর মুনাফা হয়েছিল ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর পরিশোধের পর মুনাফা কমে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ইপিএস ১৩ পয়সা কমে ০.০৩  পয়সায় দাঁড়িয়েছে ।

১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টার্ন ক্যাবলস ২০১০ সাল থেকে ১০ শতাংশ হারে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৫ সালে কোম্পানিটি সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা থেকে সর্বশেষ ৮ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে।

বর্তমান বাজারে কোম্পানিটির মোট ২ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার আছে। যার মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, সরকারের কাছে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার আছে। ২০১৫ সালে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের টালমাতাল পরিস্থিতির মধ্যে ও ইস্টার্ন ক্যাবলসের শেয়ারের দর বাড়ার কারন কি। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত। যে সকল বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত শিকার হবেন। তাই সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য ছাড়া গুজব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে এক প্রকার জুয়া খেলা (গ্যাম্বলিং) চলছে। তবে এবার ছোট বাজারে ছোট আকারে হচ্ছে। যে সব কোম্পানির দাম বাড়ার কথা, সে সব কোম্পানির দাম না বেড়ে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির দাম বেড়েই চলছে।

কয়েক দিন ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তিনি আরও বলেন, যে সব কোম্পানি সার্কিট ব্রেকারে পৌঁছেছে, তাদের দাম এত বেশি বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে এসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে বিভিন্ন গুজব রয়েছে বলে জানান তিনি। আর কিছু কিছু বিনিয়োগকারী গুজব শুনে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।