দায়িত্বশীলদের কথার বাস্তবায়ন চায় বিনিয়োগকারীরা
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন আর আশ্বাসে বিশ্বাসে করে না তারা চায় সরকার সহ নীতি নির্ধারকদের কথার বাস্তবায়ন। দীর্ঘ ছয় বছর বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল বাজারের অপক্ষোয় থেকে ও সুফল ভোগ করতে পারছে না। বরং বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
যেমন আমরা বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে দেখছি। টানা পতনের কারণে পুঁজিবাজার অধিকাংশ সময়েই অস্থির থাকে। কিন্তু একটি জিনিস আমরা লক্ষ করেছি তা হলো পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে যখন কোনো একটি ঘোষণা আসে বাজার পুনরায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সূচক ও লেনদেন উভয়ই বেড়ে যায়।
সতিকার অর্থে বিপদ যখন দরজায় এসে কড়া নাড়ে তখন সকলের দায়িত্বশীল আচরণ এবং পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। সামান্য একটু এদিক-ওদিক হলেই বিপদ ঘাড়ের ওপর এসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে শতভাগ। তাই যে কোনো সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয় খুব সতর্কভাবে।
কিন্তু আমাদের দেশের দায়িত্বশীলদের মধ্যে অনেক সময়ই দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ড- দেখা যায়। অতীতে আমরা এ ধরনের বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। তবে সেসব দিকে না গিয়ে আমরা বর্তমান পরিস্থিতির দিকেই নজর দিতে চাই।
আমাদের যতদূর স্মরণ আছে পুঁজিবাজারে গত বছরের শেষ দিকে লেনদেন প্রায় ৬০০ কোটির কাছাকাছি ওঠে এসেছিল। এর নেপথ্যে কয়েকটি কারণও ছিল। সরকার বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত বিনিয়োগসীমা দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সেই সঙ্গে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বাজার উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। যা ওই মুহূর্তে জরুরি ছিল। এর আগে টানা দরপতনে লেনদেন ২০০ কোটির ঘরে নেমে এসেছিল। সে সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ছিলেন চরম আস্থাহীনতায়। একদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়তা অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের নীরবতা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজারবিমুখ করতে উৎসাহিত করেছিল।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর থেকে বাজার কয়েক দিনের জন্য গতিশীল হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের বাজার আবারো একই ধারায় চলছে। ৬০০ কোটির লেনদেন আবারো ৩০০ কোটির ঘরে নেমে এসেছে।
এ অবস্থায় আবারো কি সংশ্লিষ্টরা বাজার পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে কিছু আশ্বাসবাণী শোনাবেন। নাকি আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। সেটি অবশ্য সময়ই বলতে পারে। তবে আমাদের কথা হচ্ছে এভাবে ঘোষণা কিংবা আশ্বাস দিয়ে আর কতোকাল বাজারের গতি ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে। এখনো কি সংশ্লিষ্টরা সঠিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে না। আমরা বহুবার বলেছি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে বাজার গতিশীল করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আশ্বাস কিংবা সিদ্ধান্তে সাময়িক সময়ের জন্য বাজারে পরিবর্তন ঘটতে পারে। স্থায়ীভাবে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অতীতে এই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা খুব একটা দেখা যায়নি। বরং গা ছাড়াভাবে হয়তো কখনো কখনো তারা বাজারমুখী হয়েছেন। অনেক সময় চাপে পড়েও তারা বাজারমুখী হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা তারা কখনোই ধরে রাখতে পারেনি।
যে কারণে মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য বাজারের উত্থান হতে না হতেই আবার পতনে মোড় নিত। কিন্তু একটা সময় বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন সময় এসেছে এ বাজারের জন্য কিছু করার।
আর পুঁজিবাজার হচ্ছে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম খাত। যথাযথভাবে নজর না দেয়ার কারণেই এ খাতটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা মনে করি পুঁজিবাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করে যদি সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তাহলে এ বাজারের অবশ্যই উন্নয়ন ঘটবে।
আমাদের কেবল আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বাজারের প্রতি আন্তরিকতা বাস্তবেও দেখাতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বহুবার আলোচনা করেছি আমাদের বাজারের অভ্যন্তরে এখনো যেসব দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
পুঁজিবাজারকে যদি শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড় করানো যায়, তাহলে কোনো অবস্থাতেই নুয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্টদের আশ্বাস কেবল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
সত্যিকার অর্থেই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকারসহ সকলের সহযোগিতা এবং সুদৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে যারা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশপাশি সব দুর্বলতা দূর হলে বাজার স্বাভাবিকভাবেই গতিশীল হতে পারে। আমরা আশা করি, যে যার অবস্থান থেকে সঠিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে।
এ্যাড. মাহামুদুল আলম ফেরদৌস
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক