ঝুঁকিপূর্ণ দরে বিক্রি হচ্ছে ডোরিন পাওয়ার
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি ডোরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড শেয়ার বর্তমানে ঝুঁকিপুর্ন দরে অবস্থান করছে। তবে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশঙ্কা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। আর কেম্পানিটির শেয়ার ডেঞ্জার জোনে নেয়ার জন্য দায়ী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বক্তব্যে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন তিনি। এমনটাই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইতে লেনদেনের শুরুর দিন শেয়ারটির ক্লোজিং মূল্য ছিল ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা। দিন শেষে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই) দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৪১। ৪০ এর ওপরে হলেই তা ডেঞ্জার। আর এ কারণে ৪০ বা তার বেশি পিই রেশিও সম্পন্ন শেয়ারে মার্জিন ঋণ দেয়া নিষিদ্ধ।
তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, তালিকাভুক্তির দিনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহজিব আলম সিদ্দিকী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০০ মেগাওয়াট হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমন বক্তব্য দেয়ায় বাজার দরকে উস্কে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে ডোরিন পাওয়ারের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬ মেগাওয়াট। ঢাকা নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন এবং ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন নামে কোম্পানিটির দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে এ দুটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে।
এ নিয়ে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ১৭৬ মেগাওয়াট। আলোচিত তিন বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের বাইরে আর কোনো প্ল্যান্টের অনুমোদন পায়নি ডরিন পাওয়ার। অনুষ্ঠানে যদিও কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, তারা ৪টি কোম্পানি নিয়ে কাজ করছে। এমন তথ্যে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডোরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের শেয়ার প্রথম কার্যদিবসে শেয়ারের দর বেড়েছে ১৯১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বা ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা। প্রথম কার্যদিবসের প্রায় ৫৪.২২ শতাংশ শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, লেনদেনের প্রথম কার্যদিবস শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩১৪টি শেয়ার হাতবদল হয়। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ২৩ লাখ ৮ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার হাতবদল হয়। অর্থাৎ উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে এ সময় প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়।
যা আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটির ছাড়া ২ কোটি শেয়ারের ৫৪.২২ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার ডিএসইতে সর্বশেষ ৮৪.৫০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। অন্যদিকে,চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার দিনশেষে ৮২.৯০ টাকায় হাতবদল হয়েছে। জানা যায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডোরিন পাওয়ারের কর পরিশোধের পর নীট মুনাফা হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে আইপিও পূর্ববর্তী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.২৯ টাকা এবং আইপিও পরবর্তী ইপিএস হয়েছে ০.২১ টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সদ্য সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে ১ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ১৮৪টি শেয়ার ৮৩ কোটি ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে এই কোম্পানির। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে দুই কার্যদিবস লেনদেন শেষে কোম্পানিটি লেনদেনের শীর্ষে তালিকায় রয়েছে। এদিকে আজ লেনদেনের শুরুতে বাড়তে শুরু করে ডোরিন পাওয়ার। এ কোম্পানিটি দিনভর ৭৪ টাকা থেকে ৭৮.৯০ পয়সা ঘরে ঘুরপাক খায়। দুপুরে ১ টার সময় ৭৭ টাকায় লেনদেন চলে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি কোম্পানির পিই রেশিও যখন ১৫/১৬ এর চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন সে কোম্পানিতে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণই। তবে বিনিয়োগকারীরা যদি কোন কারণে ভবিষ্যতে এ কোম্পানি ভালো করবে এমন ধারণা করে তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বিনিয়োগ করেন।
এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদির চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অত্যান্ত নিরাপদ।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয় কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতার উপর ভিত্তি করে। সে হিসেবে যখন কোন কোম্পানির মুনাফা কমে যায় তথা লভ্যাংশ দেয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তখন সে কোম্পানির শেয়ারদরও কমে যায়। কিন্তু পিই রেশিও উচ্চ হওয়াতে বুঝা যাচ্ছে আয় প্রবণতা কমলেও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর সে তুলনায় কমেনি।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট হাসান মাহমুদ বিপ্লব শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, পিই রেশিও ৪০ এর উপরে থাকা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ নয়, এতে লোকসানের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী পিই রেশিও না দেখে বিনিয়োগ করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাজারের এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা উচিত।