dse-cseশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানি আয়ের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৩৮টি কোম্পানির মধ্যে ৩২টি কোম্পানি উচ্চ পিই রেশিওর কারণে বিনিয়োগে উচ্চ ঝুঁকি বহন করছে।

পিই রেশিও বিবেচনায় প্রকৌশল খাতের ছয়টি কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তাই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে সতর্কতার তাগিদ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারির তাগিদও দিয়েছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি কোম্পানির পিই রেশিও যখন ১৫/১৬ এর চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন সে কোম্পানিতে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণই। তবে বিনিয়োগকারীরা যদি কোন কারণে ভবিষ্যতে এ কোম্পানি ভালো করবে এমন ধারণা করে তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বিনিয়োগ করেন।

এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদির চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অত্যান্ত নিরাপদ।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয় কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতার উপর ভিত্তি করে। সে হিসেবে যখন কোন কোম্পানির মুনাফা কমে যায় তথা লভ্যাংশ দেয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তখন সে কোম্পানির শেয়ারদরও কমে যায়।  কিন্তু পিই রেশিও উচ্চ হওয়াতে বুঝা যাচ্ছে আয় প্রবণতা কমলেও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর সে তুলনায় কমেনি।

তবে এর পেছনে কিছু কারণও থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা। তারা আরো বলেছেন, কয়েকটি কোম্পানি হঠাৎ করে লস করায় পিই রেশিও অনেক বেড়ে গেছে। এ কোম্পানিগুলো দ্রুতই মুনাফায় ফিরে আসতে পারে। তাই হয়তো বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ তুল নেননি।

এদিকে বাজারে কিছু কোম্পানিতে উচ্চ পিই রেশিও থাকলেও কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে পিই রেশিও ৪ এরও নিচে। এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি সর্বনিম্ন বলে ধরা হয়। এ কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও কম হলেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ খুব কম। সর্বনিম্ন পিই রেশিওর কোম্পানিগুলো হলো- ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের।

পিই রেশিও কম হওয়া সত্ত্বেও এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকার কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। এ লভ্যাংশ দিলেও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা।  তাই এ কোম্পানিগুলোতে তারা বিনিয়োগ করতে চান না। যে কারণে কোম্পানিগুলোর আয় ও লভ্যাংশ ভালো হওয়া সত্ত্বেও শেয়ারদর নিম্নেই রয়ে গেছে।

র‌্যাপিড সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মনোয়ার হোসেন বলছেন, পিই রেশিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে- বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এমন কোম্পানিগুলোকে এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ বর্তমানে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার দরই তলানিতে রয়েছে। তারপরও কারসাজির ফাঁদে পা দিলে তার দায় বিনিয়োগকারীদেরই নিতে হবে।

বাজার বিশ্লেষনে জানা গেছে, প্রকৌশল খাতের ছয়টি কোম্পানির মধ্যে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের পিই রেশিও ৯৭.১৪, বিডি অটোকারসের পিই রেশিও ১১৭.৯২, বাংলাদেশ ল্যাম্পসের পিই রেশিও ৫২.৭৭, মুন্নু জুট স্টাফলার্স লিমিটেড ২৯৮.০৩, রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বরের পিই রেশিও ৮৩.৭০, ইস্টার্ন কেবলসের পিই রেশিও ১৭২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩টি কোম্পানির মধ্যে এসিআই ফরমুলেশনের পিই রেশিও ৫৬.৫৮, লিবরা ইনফিউশনের পিই রেশিও ৯৩.১৬ পয়েন্ট রয়েছে, এমবি ফার্মার পিই রেশিও ৭৫.৭ পয়েন্ট রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ৩টি কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পিই রেশিও ৯৫.৬৩, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পিই রেশিও ৮০২.৫, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিসের পিই রেশিও ১৩৭.৫ পয়েন্টে, সিরামিকস খাতের ৩টি কোম্পানির মধ্যে শাইনপুকুর সিরামিকসের পিই রেশিও ১৯১.২৫, মুন্নু সিরামিকসের পিই রেশিও ১২৩,

স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের পিই রেশিও ৭৫.১৮ পয়েন্টে,  চামড়া খাতের ৩টি কোম্পানির মধ্যে এপেক্স ফুটওয়্যারের পিই রেশিও ৬৫.১২, এপেক্স ট্যানারির পিই রেশিও ৬৯.৯৪, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পিই রেশিও ২০১.১৪, পাট খাতের ২টি কোম্পানির মধ্যে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির পিই রেশিও ১৭৭.৪৬, সোনালি আঁশের পিই রেশিও ১২১.১, বস্ত্র খাতের আলহাজ টেক্সটাইলের পিই রেশিও ৫৯.১৭, আর এন স্পিনিং মিলসের পিই রেশিও ৭০.৫৬, সিমেন্ট খাতের আরামিট সিমেন্টের পিই রেশিও ৬৮.৯২, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের বঙ্গজের পিই রেশিও ৯২.৪৫,

বিবিধ খাতের বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের পিই রেশিও ১২১.৭৯,  পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং খাতের হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপারের পিই রেশিও ১৪৮.৭৫, আইটি খাতের আইটি কনসালট্যান্টস লিমিটেডের পিই রেশিও ১৯৭.৪৫, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেডের পিই রেশিও ৪৩.৯৩, সেবা ও আবাসন খাতের সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের পিই রেশিও ৪৯.৩১,

টেলিকমিউনিকেশন খাতের বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের পিই রেশিও ২০৮.৪ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের পিই রেশিও ৫৯.৪৭, ইস্টার্ন লুবরিক্যান্টসের পিই রেশিও ৪১.৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর সার্বিক পিই রেশিও যখন ২০ পয়েন্টের নিচে তখনো ৩২ কোম্পানি বিনিয়োগ ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট হাসান মাহমুদ বিপ্লব শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, পিই রেশিও ৪০ এর উপরে থাকা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ নয়, এতে লোকসানের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী পিই রেশিও না দেখে বিনিয়োগ করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাজারের এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা উচিত।