des-cseআমিনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে এসব কি হচ্ছে। দিনের পর দিন টানা দরপতন হলেও সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন ভুমিকা নিতে পারছেন না। বরং লোকসানে দেয়ালে ঠেকেছে বিনিয়োগকারীদের পিঠ। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীদের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে উঠছে।

লাভের বদলে প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে পুঁজি হারাতে হারাতে তাদের অবস্থা একেবারেই করুণ। নতুন পুঁজি নিয়ে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তাদেরই বর্তমানে পুঁজি টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে তাদের আবারো পথে বসতে হবে বলে শঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া পুঁজিবাজারে একদিকে রয়েছে তারল্যের সঙ্কট অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। বাজার উন্নয়নে সকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ, পদক্ষেপেও কাজে আসছে না। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে দরপতন। আর একের পর এক দরপতনের পুঁজি হারিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার দিনকে দিন আরো খারাপ হচ্ছে। তাই এই অবস্থাতায় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। শেয়ার বাজারে উত্থান-পতন থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে তা পুঁজিবাজার তথা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর নয়।

বাজারে এ দরপতনের পেছনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপকে দায়ী করছেন মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেট বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে। কারণ বিদেশি কিছু ফান্ডকে তরলীকরণ করতে হচ্ছে। এতে তাদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

জানা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরেই বিদেশীরা এসব কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের বিষয়টিও যুক্ত হয়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বিনিয়োগ করতে পারছে না পুঁজিবাজারে। ফলে অর্থ সঙ্কটে ভুগছে পুঁজিবাজার। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকে একক গ্রাহক ঋণ সমন্বয়ের সময় (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট)  দুই বছর বাড়ানোর কথা বললেও তা আশ্বাসেই ঝুলে রয়েছে।

যার কারণে অনেকটা নিষ্ক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারীরা। ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে ৩০০ কোটির ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে লেনদেন। তাই বাজারে তারুল্য প্রবাহ বাড়ানোসহ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো উদ্যোগ নিতে দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ধারাবাহিক দরপতনে বিগত কয়েক মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ হারিয়েছে বলে জানান আনিসুল নামের এক বিনিয়েগোককারী। তিনি জানান, বাজার ঘুরে দাড়াবে বলে বছরের শুরুতে পাঁচ লাখ টাকায় কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কিনি। এখন আমার মূলধন ২ লাখ ১০ হাজারে নেমে এসেছে।

২০১০ সালেও একবার বড় লস খেয়েছি। সেটা আর বলতে চাচ্ছি না। এখন বাজারে আবারও একই অবস্থা হচ্ছে। সঞ্চয়কৃত পুঁজি আর নেই, সব হারিয়েছি  এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বাজার ঘুরে না দাড়ালে বাকি পুঁজিটুকু শেষ হয়ে যাবে।

নতুন গভর্নর এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। গভর্নরের কাছে সাধারণ বিনিয়োগকারী হিসেবে আমার দাবি তিনি যেন এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়িয়ে দেন। এতে আমরা কিছুটা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবো।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশ কয়েক সপ্তাহের ধরে দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় গেল সপ্তাহেও দরপতন হয়েছে। কমেছে সব ধরনের মূল্যসূচক, টার্নওভার, পিই রেশিও ও বাজার মূলধন। পতন হয়েছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর।