acme lagoআফজাল হোসেন লাভলু, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সদ্য আইপিও অনুমোদন পাওয়া একমি ল্যাবরেটরিজের আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) গণনায় কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। অডিট কোম্পানির নির্দেশনা না মেনে অন্য নিয়মে ইপিএস গনণা করেছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ইনভেষ্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) অভিযোগটি আমলে না নিয়ে কোম্পানির প্রশংসায় পঞ্চমূখ।

অতিমূল্যায়িত দরে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে একমি ল্যাবরেটরীজ। যা কোম্পানিটির নিজস্ব চাহিদার থেকেও বেশি। একমি ল্যাবরেটরিজের কাট অফ প্রাইস হিসাবে ৮৫ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারিত হয়েছে। এই দরে কোম্পানিটি ৫ কোটি শেয়ার ইস্যু করবে। তবে এর মধ্যে বরাদ্দকৃত ৪০ শতাংশ বা ২ কোটি শেয়ার সাধারণ বিনিযোগকারী, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ও প্রবাসিদের জন্য। যা কাট-অফ মুল্যের ১০ শতাংশ কমে বা ৭৭ টাকায় ইস্যুর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামি ১১ এপ্রিল থেকে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন শুরু হবে।

একমি ল্যাবরেটরিজ ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল ৬০ টাকা (প্রিমিয়াম ৫০ টাকা) করে শেয়ার ইস্যু করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করে। তবে কোম্পানিটি শুধুমাত্র বুকবিল্ডিং এর কারণে এখন ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দরে সংগ্রহ করবে। এমতাবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় কারসাজি হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।

কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে চলমান পদ্ধতিতে শেয়ার প্রতি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ৮১ পয়সা সংগ্রহ পেতে পারে। চলমান পদ্ধতি অনুযায়ি, ৫ বছরের ওয়েটেড ইপিএস-এর সঙ্গে ১০ গুণ করে সর্বশেষ সময়ের শেয়ারপ্রতি সম্পদ যোগ করতে হয়। এরপরে ২ দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায় তা-ই হবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের দর। এ হিসাবে একমি ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের সর্বোচ্চ দর হয় ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।

এ প্রসঙ্গে কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান আইসিবি’র এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, কোম্পানিটির প্রতিবেদন এখনো ছাপানো হয়নি। প্রতিবেদন হাতে নিয়ে বিষয়টি আলোচনা করা হবে। তবে একমি ল্যাবরেটরিজের একটি ভালো কোম্পানি বলে প্রসংশা করেন। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে যত কোম্পানি আছে তার মধ্যে এই একমি ল্যাবরেটরিজ সবচেয়ে ভালো। কোম্পানিটির মৌল ভিত্তি অনেক ভালো। আর্থিক প্রতিবেদনের প্রতিটি দিকই অনেক ভালো।

জানা গেছে, একমি ল্যাবরেটরিজ প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ১০০টি শেয়ার ৫২ টাকা (প্রিমিয়াম ৪২ টাকা) দরে ইস্যু করেছে। তবে আইপিও’র মাধ্যমে বিনিয়োগাকরীদের কাছ এই কোম্পানি ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দরে শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। যা প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করা শেয়ারের দামের থেকে ৩৩ টাকা ২০ পয়সা বেশি।

তবে সাধারণত প্লেসমেন্টের চেয়ে কম দরে শেয়ার ইস্যু করে থাকে কোম্পানিগুলো। এমতাবস্থায় যে কোম্পানি নিজে ৫২ টাকা করে প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যু করে, সে কোম্পানি পরবর্তীতে ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দরে ইস্যুর পেছনে সন্দেহজনক কারণ আছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেছেন, ‘একমি ল্যাবরেটরিজ বেশি দরে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। কোম্পানিটি এতো দর পাওয়ার যোগ্য না। এ ছাড়া একমি’র সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন (রিভ্যালুয়েশন) ঠিক হয়নি।’ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিআইপিডি’র প্রশিক্ষণে তিনি এসব কথা বলেন।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই দর নির্ধারণ করেছেন। তবে এই প্রতিযোগিতা যে কতটুকু প্রতিযোগিতা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮৫ টাকা ২০ পয়সা দরে একমিতে বিনিয়োগের চেয়ে ব্যাংকে ডিপোজিট করা অধিক লাভজনক। কোন ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই বিনিয়োগকারীরা একমি’র থেকে বেশি মুনাফা করতে পারবে ব্যাংকে ডিপোজিটের মাধ্যমে।

একমির সর্বশেষ বছরের ইপিএস অনুযায়ী ৮৫ টাকা ২০ পয়সা ফেরত পেতে (পিই) ১৫ বছর ও ৫ বছরের ওয়েটেড ইপিএস অনুযায়ি ২৪ বছর সময় লাগবে। কিন্তু ব্যাংকে রাখলে ৯ শতাংশ হারে সুদ পেলেও ১১ বছর সময় লাগবে।

এদিকে ৫২ টাকা দরে আলফা ক্যাপিটাল প্লেসমেন্টের মাধ্যমে একমি’র ৫ লাখ শেয়ার কিনেছে। এ ছাড়া পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১০ লাখ, ঢাকা ব্যাংক ৫ লাখ, গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ৫ লাখ, সাউথইস্ট ব্যাংক ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০টি, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ১০ লাখ, ইউসিবিএল ৭৬ লাখ ৯২ হাজার ৩০০টি ও ফেডারেল ইন্সুরেন্স ৫ লাখ শেয়ার কিনেছে একই দরে।

অথচ এই কোম্পানিগুলো একমি’র ইন্ডিকেটিভ দর নির্ধারণে ৮০ টাকা বলেছে। এক্ষেত্রে একমি যোগ্য না হলেও প্লেসমেন্টের শেয়ার বেশি দরে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ৮০ টাকা বলেছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) জাহাঙ্গীর আলম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।