লোকসানের যাতাকালে পিষ্ট হচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা
আমিনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে প্রতি সাধারন বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দিন দিন প্রকট আকার ধারন করছে। দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহ সরকারের নীতি নির্ধারকদের কথায় কোনো আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। বরং দিনের পর দিন লোকসানের যাতাকালে পিষ্ট হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের উপায় কি তারা বুঝতে পারছেন না।
তাছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিক পতন থেকে যেন বের হতেই পারছে না দেশের দুই পুঁজিবাজার। এই বাজারেই কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে রয়েছে। অথচ বাজারের এমন মন্দা অবস্থায় মাথা তুলেও দাঁড়াতে পারছে না তারা।
আশায় বসে আছে কখন বাজারে গতি ফিরবে। কিন্তু এ জন্য কোনো উদ্যোগই নেই সংশ্লিষ্টদের। চলতি মাসের শুরু থেকেই বাজারে মূল্যপতন চলছে। আগের মাসগুলোতেও বাজার তেমন গতিশীল ছিল না। আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিনেও দুই বাজারের সূচক কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে দৃশ্যমান কোনো কারণ নেই। অনেক কম্পানিই ভালো লভ্যাংশও দিয়েছে। কিন্তু অজানা কারণেই বিনিয়োগকারীদের মনে ভীতি কাজ করছে। বাজারে উত্থান-পতন থাকতেই পারে। কিন্তু একটু পতন হলেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের ভীতি দূর করতে কাজ করা। তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
অর্থনীতি বিশ্লেষক আবু আহমেদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘বাজারে এই মন্দা অবস্থার পেছনে কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কম্পানি ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। তবুও ধারাবাহিকভাবেই কমছে সূচক। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি ভীতি কাজ করছে। এ থেকে আস্থা ফেরাতে কাজ করা উচিত।’
গত সপ্তাহের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চার কার্যদিবস লেনদেনে তিন দিনই বাজারে সূচক কমেছে। একদিন কিছুটা বাড়লেও খুব কম। লেনদেনও কমেছে। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল দেশের দুই বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে। ডিএসইতে সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনও, আর সিএসইতে সূচক কমেছে, কিন্তু লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি উত্তাল পাতাল। এটাই চলতি বাজারের খারাপ দিক। ভালো লভ্যাংশ ঘোষণার পরও কোনো কোম্পানির শেয়ারদর কমার অর্থ হলো বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই।
ঢাকা ব্যাংকের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস ডিবিএল সিকিউরিটিজের সিইও মোহাম্মদ আলী বলেন, ঘোষিত লভ্যাংশ আকর্ষণীয় হলে স্বল্পমেয়াদে মুনাফা পেতে কিছুটা বেশি দামেও শেয়ার কেনেন বিনিয়োগকারীরা।
এ মাসে যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার সবগুলোই ঘোষিত লভ্যাংশ আগের বছরের তুলনায় বেশি। তারপরও শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এর একটাই কারণ হতে পারে, বিনিয়োগকারীদের হাতে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থের অভাব আছে।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে না। বিশেষত ব্যাংক কোম্পানি আইনের কারণে ব্যাংক ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে না। শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার হিসাব সংশোধন করে নতুন করে কিছুটা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে সক্রিয় হবেন। এর ফলে বাজার গতিশীল হলে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও বাড়বে। সেক্ষেত্রে বাজারও যৌক্তিক আচরণ করবে। লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারদর কমার প্রবণতা থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।