titas gasরফিকুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্রূৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি (ভারপ্রাপ্ত) নওশাদ ইসলামকে অবশেষে সরিয়ে মীর মশিউর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত এমডি তিতাস গ্যাসের জিএম (ভিজিলেন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

পেট্রোবাংলার উপ-ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তারিকুল ইসলাম খান রবিবার রাতে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিতাস গ্যাস থেকে সরিয়ে নওশাদ ইসলামকে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেতিনি জানান। তবে ঠিক কী কারণে নওশাদ ইসলামকে তিতাস থেকে সরানো হয়েছে তা বলতে পারেননি তারিকুল ইসলাম খান।

নওশাদ ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর বনানীর একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্যও তাকে ওই পদ থেকে সরানো হতে পারে বলে পেট্রোবাংলা ও তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, মূল্যসংবেদনশীল তথ্য গোপনের পর এবার অডিট আপত্তি নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তোপের মুখে তিতাস গ্যাস। রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানির হিসেবে গত ছয় বছরে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছে। পরে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে ওঠা ২১২টি অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে, তিতাস গ্যাস তাদের বিভিন্ন কাজে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ২১২টি নিরীক্ষা (অডিট) আপত্তির কথা জানিয়েছে। এর অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রীয় এ কোম্পানির প্রায় ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি অডিট আপত্তি ছিল ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে, ওই দুই অর্থবছরে ৭৪টি অডিট আপত্তিতে এক হাজার ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার হিসেবে গরমিল পাওয়া গেছে। অন্যদিকে অডিটে কোম্পানির আর্থিক তথ্যে গরমিলের প্রমাণ পেলেও সেগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত তিতাসের বিরুদ্ধে উঠা ৩৭২টি অডিট আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এসব আপত্তির বিপরীতে ছয় হাজার ৪৩৮ কোটি ২১ লাখ ১৮ হাজার টাকা অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ ছয় বছরে মাত্র ২১টি অডিট আপত্তির সুরাহা করতে পেরেছে তিতাস গ্যাস।

তিতাস গ্যাসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বৈঠকে জানানো হয়েছে, আর্থিক বিধি অনুসরণ না করা, সিস্টেম লস, চুরি ও ঘাটতি, মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিতাস গ্যাসের গাড়ি ব্যবহার এবং বিদেশে প্রশিক্ষণসহ অন্য কারণে এসব অনিয়ম হয়েছে।

বৈঠক শেষে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অডিট আপত্তির সংখ্যা অনেক। এর সঙ্গে জড়িত টাকার পরিমাণও অনেক, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কমিটি ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক করে আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছে’।

সভাপতি আরো বলেছেন, ‘তিতাস কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘অন্যান্য’ কারণেও টাকা নষ্ট হয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হতে পারে না। ‘অন্যান্য’ কারণ কী, তা তিতাস গ্যাসকে স্পষ্ট করতে হবে।’ কমিটির শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুস শহীদ, আফসারুল আমীন, শামসুল হক, মঈন উদ্দীন খান বাদল এবং রুস্তম আলী ফরাজী অংশ নেন।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালের শেষ দিকে তিতাস গ্যাসের ট্যারিফ হার বিষয়ে নির্দেশনা দেয় অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর জের ধরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ও ঘোষিত ডিভিডেন্ড হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মূল্যসংবেদনশীল হলেও ওই নির্দেশনার বিষয়ে কিছুই জানায়নি তিতাস গ্যাস।

যার জেরে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছে কোম্পানিটি। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই ফাঁস হলো কোম্পানিটির অনিয়মের তথ্য। ২ হাজার কোটি অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে ৩ হাজার ৫৮২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

তিতাসের মোট ৯৮ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৮৩১টি শেয়ারের মধ্যে সরকারের হাতে ৭৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তালিকাভুক্তির আগে থেকেই বিতর্কে জড়িয়ে থাকায় কারণে মৌলভিত্তিসম্পন্ন হলেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি কোম্পানিটি।