dseশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ(ডিএসই) ট্রেকহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটিই প্রথম লভ্যাংশ। আগামী ২৪ মার্চ ডিএসইর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে।  ট্রেকহোল্ডারদের অনুমোদন স্বাপেক্ষে এ লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে। গত ৩ মার্চ ডিএসইর বোর্ড সভায় ২০১৪-১৫ হিসাব বছরের জন্য এ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ লভ্যাংশ অনুমোদন হলে এর একটি ইতিবাচক সাড়া পুঁজিবাজারে পড়বে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা। সমাপ্ত হিসাবে বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭৫ পয়সা। ট্রেকহোল্ডাররা এ লভ্যাংশ অনুমোদন দিলে প্রত্যেকে ৭২ লাখ টাকা করে পাবেন। তবে এই লভ্যাংশ থেকে ২০ শতাংশ ট্যাক্স বাবদ সরকারকে দিতে হবে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর ট্রেকহোল্ডাররা পাবেন ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটিই প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা। এ লভ্যাংশের ফলে গতিহীন পুঁজিবাজারের গতি আসবে বলে মনে করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানগুলো গত কয়েক বছর খুব কষ্ট করে টিকে আছে। এজিএমে এ লভ্যাংশ অনুমোদন হলে আগামী দিনে তাদের জন্য এটি একটি বিশাল সাপোর্ট হিসাবে কাজ করবে।

এদিকে মিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জে রূপান্তরিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ। তবে পরিচালনা পর্ষদ ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের পর তা চুড়ান্ত হবে। আগামী ২৪ মার্চ রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ডিএসইর এজিএম অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে পরিচালনা পর্ষদ ঘোষিত ১০ শতাংশ লভ্যাংশ এজিএমে অনুমোদন পেলে তা বিতরণে রিজার্ভ ব্যবহার করতে হবে ডিএসইকে। কারণ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণের জন্য যে পরিমাণ আয় হওয়ার দরকার ছিল ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে সে পরিমাণ আয় হয়নি।  এ সময়ে ডিএসইর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭৫ পয়সা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদানের জন্য শেয়ারপ্রতি আয় হওয়ার দরকার ছিল ১ টাকা।

সে হিসাবে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের জন্য শেয়ারপ্রতি অতিরিক্ত ২৫ পয়সা দিতে হবে ডিএসইকে। আর সে অতিরিক্ত অর্থ যোগান দিতে হবে রিজার্ভ থেকে। অর্থাৎ লভ্যাংশ দেওয়ার জন্য রিজার্ভ ভাঙ্গতে হবে ডিএসইকে।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ওবায়দুর রহমান বলেন, কোন কোম্পানি যদি আয়ের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিতে চায় তাহলে তা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ওই কোম্পানির রিজার্ভ থেকে অতিরিক্ত অংশ দিতে হবে। যেহেতু ডিএসইর শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৭৫ পয়সা সেজন্য শেযারপ্রতি আরও ২৫ পয়সা রিজার্ভ থেকে যোগান দিতে হবে।

এদিকে ডিএসইর আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ডিএসইর নীট আয় হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ডিএসইর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদান করতে প্রয়োজন হবে প্রায় ১৮০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে মুনাফা বিতরণে রিজার্ভ থেকে আরও ৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা দিতে হবে ডিএসইকে।

আগের হিসাব বছরে ডিএসইর শেয়ারপ্রতি আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৪ পয়সা এবং নীট আয়ের পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ডিএসই’র আয়ের মূল উৎস হচ্ছে-লাগা চার্জ, হাওলা চার্জ ও তালিকাভুক্তি ফি।

শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় লাগা এবং হাওলা চার্জ থেকে আয় কমেছে। পাশাপাশি সুদবাবদ আয়ও কমেছে। তারপরও আগের হিসাব বছরের তুলনায় আয় সামান্য বেড়েছে। মূলত ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করায় নীট আয় বা ইপিএস বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ডিএসইতে মোট লেনদেন (টার্নওভার) হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে এর পরিমাণ হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকার।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যবসায়িক মন্দাবস্থা চলছে। ১০ শতাংশ লভ্যাংশ পেলে কিছুটা সহায়ক হবে। যা শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন। শাকিল রিজভী আরও বলেন, লেনদেন ও ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার কমে যাওয়ার কারণে ডিএসইর আয় বাড়ানো ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তারপরও ডিএসইর আয় বেড়েছে। ডিএসইর ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এ আয় বেড়েছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলো লোকসানের মধ্যে দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। অনেকে অফিস ভাড়া প্রদান করতে পারছে না। এমতাবস্থায় ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক সমস্যা সমাধানে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। ডিএসইর নিরীক্ষক হিসাবে কাজ করেছে অডিট ফার্ম এ কাশেম এন্ড কোং।