apollo ispatবিশেষ প্রতিনিধি, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম:  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের অ্যাপোলো ইস্পাত ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছে। ফলে এ কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পাওয়া ২১১ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। সে অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ার দুই বছরের মধ্যেই আবার বড় অঙ্কের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড।

অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত অর্থ ঋণ পরিশোধে ব্যয় করার পরও আইপিওর সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির ব্যাংকঋণ এখন ৪৩ কোটি টাকা বেশি। এদিকে মোট ঋণের একটি বড় অংশই চলতি বছর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোম্পানির পুঞ্জীভূত রিজার্ভ কম থাকায় নতুন ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা ।

জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে ২০১৩ সালে পুজিরবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে অ্যাপোলো ইস্পাত। শর্ত ভঙ্গ করে আইপিওর অর্থের প্রায় পুরোটাই ঋণ পরিশোধে ব্যয় করে কোম্পানিটি। বিধি ভঙ্গের দায়ে পরিচালকরা জরিমানা গুনলেও খেলাপি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান তারা ও কোম্পানি। তবে দুই বছর যেতে না যেতেই আবারো বেড়েছে ঋণের বোঝা। এখন তা আইপিওর সময়ের চেয়েও বেশি।

অ্যাপোলো ইস্পাতের আইপিও প্রসপেক্টাস ও আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানির মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৬ কোটি টাকা। আইপিও আবেদনের সময় অর্থাত্ ২০১২ সালের ৩০ জুন তা ছিল ৩৪৩ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ২২০ কোটি থেকে ২১১ কোটি টাকাই ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হয়। এতে সাময়িকভাবে ব্যাংকঋণের পরিমাণ কমে এলেও পরবর্তী বছর থেকে তা আবারো বাড়তে শুরু করে।

গত তিন বছরের নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে অ্যাপোলো ইস্পাতের মোট ঋণ দাঁড়ায় ৩৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ১২৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১০৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চলতি দায় ছিল ১৩৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
পরের বছর ২০১৪ সালে ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমে আসায় কোম্পানিটির মোট ঋণ দাঁড়ায় ২৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। অথচ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরে তা আবারো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৬ কোটি টাকা।

ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির চলতি দায়ও বেড়েছে। ২০১৪ সালে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ১৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, চলতি অর্ধবার্ষিকীতে তা ১৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের চলতি দায় ছিল ৮৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ১২৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও ব্যাংক ওভারড্রাফটসহ ঋণের চলতি দায় দাঁড়িয়েছে ২৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অথচ এ সময়ে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস রয়েছে মাত্র ১৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ফলে নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে অ্যাপোলো ইস্পাতকে। এতে মুনাফার উল্লেখযোগ্য অংশই চলে যাচ্ছে সুদের পেছনে। ২০১৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি ৩৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে, যা তাদের মোট মুনাফার ৩৪ শতাংশেরও বেশি।

এ বিষয়ে অ্যাপোলো ইস্পাতের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান বলেন, কোম্পানির ব্যবসা বেড়েছে। এখন তুলনামূলক কম মূল্যে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতের সুফল নিতে আমরা বেশি আমদানি করছি। এতে ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে আমাদের সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে। কোম্পানি সচিব এসকে আবুল হাসানেরও একই মত।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় অ্যাপোলো ইস্পাতের আইপিও অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির সাবেক এক পরিচালকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শে এ কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়া স্থগিত রাখে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। পরে তদন্ত শেষে ২০১৩ সালে কোম্পানিটিকে ১০ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

প্রসপেক্টাসে আইপিওর ১৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যাংকঋণ পরিশোধে ও ৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা নতুন এনওএফ প্রজেক্টে ব্যয়ের ঘোষণা দেয় কোম্পানি। তবে আইপিও তহবিল থেকে ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত অর্থের চেয়ে ৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা বেশি ব্যবহার করে তারা। এ কারণে অ্যাপোলো ইস্পাতের সব পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে কমিশন।