শেয়ারবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম, ঢাকা: দেশের বীমা খাতের উন্নয়নে ৮ কোটি ডলার বা ৬৪০ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাংলাদেশ বীমা একাডেমি, সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি) ও জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) আধুনিকায়নে এ অর্থ ব্যয় হবে।

আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান বণিক বার্তাকে জানান, দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক মোট ৩০ কোটি ডলার অর্থাত্ প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ডলার বীমা খাতের উন্নয়ন অর্থায়নে ব্যয় করা হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি চুক্তি হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের টেকনিক্যাল টিম এ বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ ও সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে চলতি মাসেও এ রকম একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, দেশের আর্থিক খাত উন্নয়নে অর্থায়ন করতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক, যার মধ্যে বীমা খাতও রয়েছে। কারণ তারা মনে করছে বাংলাদেশের বীমা খাত সম্ভাবনাময়। এজন্য তারা আইডিআরএ ও ইন্স্যুরেন্স একাডেমিকে শক্তিশালীকরণে প্রাধান্য দিচ্ছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বীমা করপোরেশনকেও আধুনিকায়ন করা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই আমাদের আর্থিক খাত একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।

এছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে পেনশন স্কিম চালু করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।  দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পেনশন স্কিম চালু থাকলেও বেসরকারি খাতে এর  পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নেই। এতে পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা।

এদিকে বীমা-সংশ্লিষ্টদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ বীমা একাডেমি। তবে কোনো সরকারের আমলেই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে যথেষ্ট সুফল পায়নি দেশের বীমা খাত।

২০১০ সালে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের পর বীমা একাডেমি উন্নয়নের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। ২০১১ সালের নভেম্বরে একাডেমি পুনর্গঠন নিয়ে আইডিআরের সঙ্গে আলোচনায় বসে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল একাডেমির অবস্থা সম্পর্কে লিখিতভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানায় আইডিআরএ। বাংলাদেশ বীমা একাডেমিকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের রূপ দিতে বেশকিছু সুপারিশ করে আইডিআরএ। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নিজেদের কাছে ন্যস্ত করার অনুরোধ জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সুপারিশে আইডিআরএ বলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স (আইবিবি) নামে দুটি সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখান থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংকিং-সংশ্লিষ্ট অন্য আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন কোর্সের আওতায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে বীমা একটি সম্ভাবনাময় খাত হলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ তুলনামূলক কম।

এদিকে সাধারণ ও জীবন বীমা করপোরেশনকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনার লক্ষ্যে আইন ও কাঠামোগত সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমে বীমা আইনের সঙ্গে দুই করপোরেশনের সাংঘর্ষিক নিয়মকানুনগুলো পর্যালোচনা করা হবে। জাতীয় বীমানীতির আলোকেই সংস্কার-পরিবর্তনের সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের বীমা খাত মূলত ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ১৯৩৮ এবং স্বাধীনতার পরে ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট, ১৯৭৩ দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৮৪ সালের পর বেশ কয়েকবার বীমা আইন সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে বীমা আইন সংশোধন করা হয়। তবে বীমা আইন, ২০১০-এর আলোকে প্রয়োজনীয় অনেক বিধি ও প্রবিধান এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।সুত্র: বনিক বার্তা