sbআহসান আমীন, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে উথান পতন চলছে। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ অবস্থার মধ্যে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে। ফলে বাজারের উপর পুরোপুরি ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া নতুন করে বিনিয়োগ করতে হিমসিম খাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর তলানিতে ঠেকেছে। গত কয়েকমাসের টানা পতনের পর বর্তমানে বাজার সাপোর্ট লেভেলে অবস্থান করছে। এই কয়েক মাসে অনেকে আবার পুজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

নতুন করে যারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তারা গত ৩০ অথবা ১৫ কার্জ দিবসে লেনদেন এ শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো থেকে শেয়ার নির্বাচন করতে পারেন অথবা বছরের সর্বনিম্ন দামে যেসব শেয়ার অবস্থান করছে সেখান থেকে শেয়ার নির্বাচন করতে পারেন।

নতুন করে যারা বিনিয়োগ করতে চান তাদের জন্য বিশ্লেষকদের পরামর্শ হচ্ছে কমপক্ষে ৪ টা শেয়ারে বিনিয়োগ করলে আপনার ঝুকি হ্রাস পাবে। এখানে গত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে অবস্থান করা শেয়ারের তালিকা দেওয়া হোল।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) এশিয়ার অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ঝুঁকিমুক্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে দেশি এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ বাজার বিনিয়োগের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পাশাপাশি নতুন করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ শুরু হলে বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই বর্তমান পিইতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারীরা অধিক মুনাফার সুযোগ নিতে পারেন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এ মুহুর্তে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারবে। কারণ মন্দা বাজারের কারণে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ফেস ভ্যালুর কাছাকাছিতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। তারা এখন বিনিয়োগ করলে একদিকে তাদের মুনাফার সম্ভাবনা বাড়বে অপরদিকে বাজারে লেনদেনের পরিমান বাড়বে। যা বাজারের বর্তমান মন্দাবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য অতীব প্রয়োজন।

এদিকে বর্তমান তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা, মুনাফা, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের সমন্বয়ে দিনশেষে শেয়ার দরেরও পরিবর্তন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দর কখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়, অবার কখনো তলানিতে নেমে আসে। আর এ সুযোগে দক্ষ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর ভবিষৎ বিবেচনায় নতুন বিনিয়োগ করে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিয়োগে সাফল্য অর্জনের বেশ কিছু উপায় রয়েছে- এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার দর কোন লেভেলে রয়েছে। যদি কোন কোম্পানির শেয়ার বাটম লেভেলে থাকে। তবে, কোম্পানির বর্তমান মুনাফা ও ভবিষৎ মুনাফা কেমন হতে পারে তা বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বর্তমানে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩০টি কোম্পানির শেয়ার দর বিগত একবছরের মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে (৩ মার্চ ডিএসইর লেনদেন তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি, মিচুয়্যাল ফান্ড ব্যাতিত, সর্বনিম্ন শেয়ার দরের সাথে ১ টাকার ব্যবধান রয়েছে এমন কোম্পানিগুলো তালিকায় স্থান পেয়েছে)।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির (বিএসসিসিএল) শেয়ার দর রয়েছে বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। সর্বশেষ শেয়ারটির দর ছিল ১০৩.৬০ টাকা। যদিও গেল ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ছিল ১৭৭ টাকা ও সর্বনিম্ন ছিল ৯৫.০৭ টাকা। এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ব্যবসা বাড়ছে। আন্তজার্তিক টেরেস্ট্রিয়া ক্যাবল আইটিসি অপারেটদের শর্ত সাপেক্ষে বিএসসিসিএল থেকেত সরাসরি ইন্টারনেট ব্যান্ডইউডথ কেনার অনুমতি দেয়ায় রাষ্ট্রয়ত্ব এ কোম্পানির ব্যবসা বাড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মনোয়ার হোসেন শেয়ারবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কিছু শর্তসাপেক্ষে এ অনুমতি দিয়েছেন। আইটিসি অপরেটরা নিজেদের ব্যবহ্রত ব্যান্ডইউথের সব্বোর্চ ১০ শতাংশ ব্যাকআপ হিসেবে বিটিআরসি অনুমতি সাপেক্ষে বিএসসিসিএল থেকে সরাসরি ব্যান্ডইউথ  ক্রয় করতে পারবে। তবে এই ব্যান্ডইউথ দেশে ব্যবহার করতে হবে। ব্যান্ডইউথ  বিদেশে রপ্তানি করতে চাইলে আইটিসি অপারেটদের সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে এর প্রভাব কোম্পানিতে পড়বে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিনশেষে আইটি খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমরা টেকনোলজি সর্বশেষ দর ছিল ২১.৪০ টাকা। যদিও গেল ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ছিল ৩৮.৭ টাকা ও সর্বনিম্ন ছিল ২০.০৪ টাকা।

অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার দর রয়েছে ১৯.২০ টাকা। বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন শেয়ার দর ছিল ১৮.৯ টাকা।

সেন্টাল ফার্মার শেয়ার দর রয়েছে বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ১৯.৫ টাকায় হাতবদল হয়েছিল। কিন্তু এর আগে বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনিম্ন ছিল ১৯.২০ টাকা।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের সর্বশেষ কার্যদিবসে ১০.১০ টাকায় হাতবদল হয়। যদিও বিগত ৫২ সপ্তাহের শেধ্য কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দর ছিল ৯.৭ টাকা।

ডেল্টা স্পিনাসের শেয়ার দর রয়েছে বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দর ছিল ৮.৫ টাকা। আর সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ৯.৩০ টাকায় লেনদেন হয়।

ডেসকোর শেয়ার দর রয়েছে সর্বনিম্ন অবস্থানে। গতকার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৪৭.১০ টাকায় লেনদেন হয়। এদিকে, বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন শেয়ার দর ছিল ৪৬.৫০ টাকা।

দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ার দর রয়েছে ১১.৫০ টাকা। কিন্তু বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ১০.৪০ টাকায় হাতবদল হয়।

এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার দর রয়েছে বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। গতকার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৮.৪০ টাকায় লেনদেন হলেও বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৮.২০ টাকায় হাতবদল হয়েছিল।

ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ার দর বিগত এ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। গত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১০.৪০ টাকা। এদিকে, বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ১০ টাকায় হাতবদল হয়েছে।

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার দর রয়েছে ৮.৪০ টাকা। যা বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে রয়েছে প্রায় সর্বনিম্ন অবস্থানে। কারণ, এর আগে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৮ টাকায় হাতবদল হয়েছে।

ফাইন ফুডের শেয়ার দরও বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। গতকার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৮.২০ টাকায় হাতবদল হয়। যদিও বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন শেয়ার দর ছিল ৭.৮০ টাকা।

ফু-ওয়াং ফুডের দর রয়েছে বিগত এ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সর্বশেষ কার্যদিবসে ১৪.৩০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির সর্বনিম্ন শেয়ার দর ছিল ১৪.১০ টাকা

জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের শেয়ার দর রয়েছে প্রায় সর্বনিম্ন অবস্থানে। গতকার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ৮.৯০ টাকায় হাতবদল হলেও বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৮.৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

হামিদ ফেব্রিকসের শেয়ার দর রয়েছে ১৭.০০ টাকা। যদিও বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বনিম্ন ১৬.৬০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৮.৩০ টাকায় হাতবদল হয়েছে।

খান বাদ্রাস পিপি ওভেনের শেয়ার দরয়েছে বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ১৮.৬০ টাকায় হাতবদল হলেও বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বনিম্ন ১৮.০০ টাকায় হাতবদল হয়েছিল।

কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার গতকার্যদিবসে ১১.৩০ টাকায় হাতবল হয়। কিন্তু বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ১১.১০ টাকায় হাতবদল হয়েছে।

ম্যাকসন স্পিনিংরে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬.৫০ টাকা কিন্তু বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৬.৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

মেট্রো স্পিনিং লেনদেন হচ্ছে ৮.০০ টাকা। বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৭.২০ টাকায় লেনদেন হয়েছিল।

মুজাফ্ফর হোসেন স্পিনিংরে শেয়ার সর্বশেষ ২২.৮০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। যা বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন। এর আগে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ২২ টাকায় লেনদেন হয়েছিল।

মিথুন নিটিংর শেয়ার দর রয়েছে ৫৯.৫০ টাকায়। গত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৫৯ টাকায় হাতবদল হয়েছিল ।

ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার দর রয়েছে ৯.১০ টাকা। যা বিগত ৫২ সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৮.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার দর রয়েছে প্রায় সর্বনিম্ন অবস্থানে। বিগত ৫২ সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৮.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। কিন্তু গত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ৮.৯০ টাকায় হাতবদল হয়েছে।

পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সায়হাম টেক্সটাইল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্টান্ডাড ব্যাংক, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ ইয়ার্ড’র শেয়ার বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে লেনদেন হচ্ছে। অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতে, বিনিয়োগ হবে- তথ্য নির্ভর ও দীর্ঘমেয়াদি। তবে লোকসানি ও পারিবারিক আধিপত্য রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ না করাই উত্তম।