ডিএসই, শেয়ারবাজার, বিএসইসিআফজাল হোসেন লাভলু :   পুঁজিবাজার বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল পাতাল পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে কিছু দুর্বল মৌল ভিত্তি কোম্পানির শেয়ারের দর হু হু করে বাড়ছে। বাজারে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর না বাড়লে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে তুলনামূলক দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দর। তবে হু হু করে বাড়লেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছু করতে পারছে না। ফলে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। গত পনের কার্যদিবসে স্বল্প মূলধনি ও দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দরে উল্লম্ফন লক্ষ করা গেছে।

এদিকে ব্যাংকিং খাতসহ ভাল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর না বাড়লে বাড়ছে ঝুঁকিপর্ন দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর।  কিছুদিন বিরতির পর আবারো দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বাড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ তদন্ত এবং প্রয়োজনে সাময়িক স্থগিত করা হচ্ছে। কারসাজিতে জড়িতদের জরিমানাও করা হচ্ছে।

কিন্তু এর পরও অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না। এর আগে সংবেদনশীল তথ্য ছাড়া অস্বাভাবিক দর বাড়ায় বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে আবারো অযৌক্তিভাবে দর বাড়ছে কিছু কোম্পানির।

এদিকে পুঁজিবাজারে বর্তমানে বেশ কিছু কোম্পানি আয়ের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাসিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে ২০টি কোম্পানির পিই রেশিও (দাম-আয় অনুপাত) আটাশিরও বেশি। আর একটি কোম্পানির পিই রেশিও ৫৮৭!

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি কোম্পানির পিই রেশিও যখন ১৫/১৬ এর চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন সে কোম্পানিতে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণই। তবে বিনিয়োগকারীরা যদি কোন কারণে ভবিষ্যতে এ কোম্পানি ভালো করবে এমন ধারণা করে তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকে বিনিয়োগ করেন।

ডিএসইর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পিই রেশিও অবস্থান করছে আরএকে সিরামিকসের। এ কোম্পানির পিই রেশিও ৫৮৭। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে আয় দিয়ে এ কোম্পানিতে করা বিনিয়োগ ফিরে আসতে সময় লাগবে ৫৮৭ বছর! এরপরই সর্বোচ্চ পিই রেশিও এটলাস বাংলাদেশের। কোম্পানিটির পিই রেশিও ৩৪০। মুন্নু সিরামিকসের পিই রেশিও ৩১৪। ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের পিই রেশিও ২১৩। তাল্লু স্পিনিংয়ের পিই রেশিও ২০৯।

এছাড়া বিএসআরএমের পিই রেশিও ১৭৮, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ১৩৮, মুন্নু স্ট্যাফলার্সের ১৩২, সিএমসি কামাল, বিএসসির ১২৯, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ১২৯, হাক্কানি পাল্পের ১২২, বাংলাদেশ ল্যাম্পসের ১১৫ এবং বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ১০৮। আর বিডি অটোকারস, বীকন ফার্মা, দেশ গার্মেন্টস, ন্যাশনাল টি, লিব্রা ইনফিশনস এবং কাশেম ড্রাইসেলের পিই রেশিও একশর নিচে হলেও আটাশির বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয় কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতার উপর ভিত্তি করে। সে হিসেবে যখন কোন কোম্পানির মুনাফা কমে যায় তথা লভ্যাংশ দেয়ার সম্ভাবনা কমে যায় তখন সে কোম্পানির শেয়ারদরও কমে যায়। কিন্তু পিই রেশিও উচ্চ হওয়াতে বুঝা যাচ্ছে আয় প্রবণতা কমলেও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর সে তুলনায় কমেনি।

তবে এর পেছনে কিছু কারণও থাকতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কয়েকটি কোম্পানি হঠাৎ করে লস করায় পিই রেশিও অনেক বেড়ে গেছে। এ কোম্পানিগুলো দ্রুতই মুনাফায় ফিরে আসতে পারে। তাই হয়তো বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ তুল নেননি।

এদিকে বাজারে কিছু কোম্পানিতে উচ্চ পিই রেশিও থাকলেও কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে পিই রেশিও ৪ এরও নিচে। এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি সর্বনিম্ন বলে ধরা হয়। এ কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও কম হলেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ খুব কম।

সর্বনিম্ন পিই রেশিওর কোম্পানিগুলো হলো- ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের। পিই রেশিও কম হওয়া সত্ত্বেও এ কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকার কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। এ লভ্যাংশ দিলেও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। তাই এ কোম্পানিগুলোতে তারা বিনিয়োগ করতে চান না। যে কারণে কোম্পানিগুলোর আয় ও লভ্যাংশ ভালো হওয়া সত্ত্বেও শেয়ারদর নিম্নেই রয়ে গেছে।

দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা অতীতে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছি। কারসাজিতে জড়িতেদের শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। তার পরও অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ছে। বিষয়টি বিএসইসির গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’