পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল পেছনে কোম্পানির পরিচালকরা দায়ী
বর্তমান পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে সর্বমহলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে টালমাতাল পরিস্থিতিতে লেনদেন শুণ্যের কোঠায় চলে আসছে। টানা ৭ কার্যদিবস পর সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। দিনশেষে লেনদেন হয়েছিল ৪১৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
কিন্তু মঙ্গলবার লেনদেন তো বাড়েই-নি বরং লেনদেন নেমে গেছে ২০০ কোটি টাকার ঘরে। সোমবারের তুলনায় সাড়ে ২৮ শতাংশ কমে দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৯৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। এটি গত সাড়ে ৬ মাসের মধ্যে ডিএসইর সর্বনিম্ন লেনদেন।
গত কয়েক বছরের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিছুটা স্থিতিশীল হয়। ২০১৪ সালে স্থিতিশীলতার স্বপ্ন জাগিয়ে বছর শুরু হয় পুঁজিবাজারে। তবে বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। বছর শেষে লেনদেন কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এই সময়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ বেশ কিছু সংস্থারমূলক পদক্ষেপ নিলেও তার সুফল পায়নি বিনিয়োগকারীরা।
এ বছরও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনে হিড়িক ছিল পুঁজিবাজারে। আর্থিক প্রতিবেদন সঠিক নিয়মে না দেখে অনুমোদন দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমনকি অর্থমন্ত্রণালয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কে চিঠি দিয়ে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়।
বরাবরের মতো সক্রিয় ছিলো কারসাজি চক্র। বিশেষ করে দূর্বল মৌলভিত্তি ও ছোট মূলধনী কোম্পানির শেয়ারকে কেন্দ্র করে কারসাজি চক্র ছিলো সক্রিয়। অলোচিত এ সময়ে বিএসইসি ব্যস্ত ছিলো আইপিও এবং রাইট শেয়ার অনুমোদন দিতে। এ সুযোগে বাজার থেকে চলে গেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির হিড়িকের ফলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকরা বাজারে শেয়ার বিক্রির রেকর্ড করছে। পুঁজিবাজার স্মরনকালের দরপতনের সময় কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করছিল। ঠিক এবারও কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করছে। আর শেয়ার বিক্রির ফলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।
ফলে লেনদেন সংকটে বাজারে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীলতা। দেশের রাজনীতি পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও অস্থিতিশীল রয়েছে পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য বছরের পর বছর দাবী জানালো ও এখনো স্থিতিশীল বাজার উপহার দিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই পুঁজিবাজার নিয়ে আতঙ্কে কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যর্থতা বাজার অস্থিতিশীলতার নেপথ্যের প্রধান অন্তরায়। এছাড়া কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার বিক্রির ফলে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। মন্ধা বাজারে কোম্পানির পরিচালকরা কি করে শেয়ার বিক্রি করে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।
শহিদুল ইসলাম