পুঁজিবাজারে চলছে ডিভিডেন্ড ঘোষনার মৌসুম। প্রায় প্রতিদিনই থাকছে কোনো না কোনো কোম্পানির বোর্ড সভা। আর দীর্ঘ এক বছরের বিনিয়োগের বিনিময় পেতে অধীর আগ্রহে থাকছে বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি ঘোষিত ডিভিডেন্ডের পরিমানের ভিত্তিতে অনেক বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছেন। তবে ডিভিডেন্ড মৌসুমে বাজারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলছে।

এদিকে পুঁজিবাজার ২০১০ সালে মহাধসের কবলে পড়ায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। ধসের পর থেকে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে আসায় ডিভিডেন্ডের পরিমাণও কমেছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা সমন্বয় করতে না পেরে এখনো বয়ে চলছে লোকসানের বোঝা।

যেহেতু ডিভিডেন্ড মৌসুম এবং ব্যাংকিং খাতসহ বেশ কিছু খাতের কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা ও ইপিএস বেড়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিগুলোর রিজার্ভও উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে। আর এসব দিক বিবেচনায় বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড দিয়ে লোকসান সমন্বয়ের আশায় রয়েছে।

লোকসানের বোঝা কিছুটা কমানোর জন্য এবার বিনিয়োগকারীদের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছে বস্ত্র ও ব্যাংকিং খাতসহ প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি থেকে কাঙ্খিত ডিভিডেন্ড পেলে ক্ষতির মাত্রা কিছুটা হলেও সমন্বয় হবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, গত একমাসে সূচকের উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে চলছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের অধিকাংশ কোম্পানি ডিসেম্বর ক্লোজিং। অর্থাৎ এ খাতের অধিকাংশ কোম্পানির বছর সমাপ্ত হবার পাশাপাশি নিরিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষনা করতে শুরু করেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো মধ্যে বর্তমান সময়েই অধিকাংশ কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষনা করে থাকে। সে হিসেবে বাজারে মাসের বেশিরভাগ সময় দরের উত্থান আশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।

আর কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড ঘোষনাকে কেন্দ্র সার্বিক বাজার স্থিতিশীলতার আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ এক বছরের বিনিয়োগের ফলাফল হিসেবে কোম্পানিগুলো ঘোষনা করছেন লভ্যাংশ। লভ্যাংশের পরিমান এবার বাড়তি পাবে বলে এমন প্রত্যাশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে এ ডিভিডেন্ড মৌসুমে কারসাজি চক্র সক্রিয় হয়ে থাকে প্রতিবছর। কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে মধ্যে ডিভিডেন্ডের ইস্যু সবার ওপরে। আর এ ইস্যুতে অতি সহজে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিছু চক্র। ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমান কি হতে পারে, তা নিয়ে আগেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দেয় চক্রগুলো। অনেক ক্ষেত্রে এসব গুজব সত্যিও হয়।

এমনকি কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজোস করে অনেক সময় আগেই কিছু তথ্য ফাঁস করা হয়। ইচ্ছেমত ডিভিডেন্ডের পরিমান গুজব আকারে ছড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার দর অতি সহজে কমিয়ে বা বাড়িয়ে ফেলতে পারে এসব চক্র। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সরল মনের বিশ্বাসের কারণেই এটি সম্ভব হয়।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মোটামুটি ভালো রিজার্ভ থাকা কোম্পানির মধ্যে বেশ কিছুর ক্লোজিং ডিসেম্বরে। বিশেষ করে তারা ব্যাংকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। অর্থাৎ কিছু দিনের মধ্যেই কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে। এছাড়া যেসব কোম্পানি অর্থবছরের ডিভিডেন্ড দিয়েছে তারাও অন্তবর্তীকালীন ডিভিডেন্ড দিতে পারেন। তাতে কিছুটা হলেও লোকসান কাটিয়ে ওঠা যাবে।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী এ্যাড. মাহামুদুল আলম বলেন, ডিভিডেন্ড মৌসুমে মার্কেট ভালো থাকাটা স্বাভাবিক। অনেক কোম্পানিই তাদের অডিট রিপোর্টে ভালো মুনাফা দেখিয়েছে। তাই এসব কোম্পানির কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বেশি। গত বছরও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখেই ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

তবে বাজারে ব্যাপক দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেননি, এ বছরও বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর কাছে ভালো ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করছে। কোম্পানিগুলো ভালো ডিভিডেন্ড দিলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজার নিয়ে আস্থা ফিরে আসবে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ মতে, একটি কোম্পানির ডিভিডেন্ড পরিমান তার পরিচালনা পর্ষদের সভায় নিশ্চিত হয়। সমাপ্ত বছরের নিরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রায় সকল পরিচালকের আলোচনা সাপেক্ষেই তা নির্ধারিত হয়। তাই ডিভিডেন্ডের পরিমান আগে থেকে নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব।

তবে বছর জুড়ে কোম্পানির আয়ের পরিমান দেখে তা আঁচ করা যেতে পারে। তাই কোম্পানির আয় দেখেই বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এতে গুজবে পড়ে লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকে।

আমিনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম