নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ডিসেম্বরের মধ্যেই স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচার সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে। এর আওতায় ঘরে বসে বিনিয়োগকারীরা মূল বোর্ডে নিজ ক্রয়-বিক্রয়াদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

স্টক এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তারা সম্প্রতি এ তথ্য দেন। ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদিত প্রতিনিধির সাহায্য ছাড়াই একজন বিনিয়োগকারী নিজ স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকে সরাসরি ডিএসইর মূল ট্রেডিং সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবেন এবং তার ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, কোনো বিনিয়োগকারী তার বিও হিসাবে নেই, এমন শেয়ার বিক্রির আদেশ দিলে ট্রেডিং সিস্টেমের সফটওয়্যার তা গ্রহণ করবে না। একই বিষয় ক্রয়াদেশের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। কোনো সিকিউরিটিজের মূল্য পরিশোধ করার মতো অর্থ বিও হিসাবে না থাকলে তা কেনার আদেশ নাকচ করে দেবে সফটওয়্যার।

এছাড়া, ব্রোকারের সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত প্রতিনিধি অযৌক্তিক বা ভুল মনে করলে অনলাইনে আসা যে কোনো ক্রয়-বিক্রয়াদেশ বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারবেন। অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচার পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে বর্তমান পদ্ধতিতে লেনদেনের সুযোগও বহাল থাকবে। একজন বিনিয়োগকারী যে পদ্ধতিতেই শেয়ার কেনাবেচা করুক না কেন, তার পোর্টফোলিওর তথ্য-উপাত্ত একই থাকবে।

ডিএসই কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে এ সুবিধা চালু করা হবে। প্রথম দুই-তিন মাস সবার জন্য বিনামূল্যে অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচার সুবিধা থাকবে। মাস ছয়েক এ সেবার মাশুলে ডিসকাউন্ট পাবেন বিনিয়োগকারীরা। সব বিনিয়োগকারী যাতে নতুন এ পদ্ধতির সুবিধা সম্পর্কে ভালোমতো জানতে পারেন, এজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থেকে অনলাইনে সরাসরি শেয়ার কেনাবেচায় কোন ক্ষেত্রে কেমন ফি ধার্য করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

স্মার্টফোন বা ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করে শেয়ার কেনাবেচা করলে বিনিয়োগকারীদের লিখিত অর্ডার দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীকে আইডি ও পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করতে হবে। ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডিং প্লাটফর্মে শেয়ার লেনদেন-সম্পর্কিত যেসব তথ্য পাওয়া যায়, তার সিংহভাগই স্মার্টফোন বা ডেস্কটপ ট্রেডিং প্লাটফর্মে দেখতে পারবেন। এবং এক্ষেত্রে তথ্য পাওয়া যাবে রিয়েল টাইমে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে ডিএসই তাদের দেড় দশকের পুরনো ট্রেডিং সিস্টেম প্রতিস্থাপন করে। নতুন ট্রেডিং সিস্টেম সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি নাসডাক ওএমএক্স এবং ফ্লেক্সট্রেড। নাসডাক ওএমএক্স মূলত উন্নততর ট্রেডিং সিস্টেমসের ম্যাচিং ইঞ্জিনটি সরবরাহ করে। অন্যদিকে ফ্লেক্সট্রেড দিয়েছে ডিএসইর নতুন অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।

ডিএসইর সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে কোম্পানি দুটি এরই মধ্যে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার থেকে অনলাইনে শেয়ার কেনাবেচার ট্রেডিং সিস্টেম প্রস্তুত করেছে। সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার স্থাপনের কাজও শেষ। আগামী নভেম্বরে ডিএসই তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদিত প্রতিনিধিদের নতুন সিস্টেমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে, যাতে তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগকারীরাও বিষয়টি জানতে পারেন।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্মার্টফোনে শেয়ার কেনাবেচার জন্য বিনিয়োগকারীদের নিজ ফোনে ডিএসইর দেয়া একটি অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে হবে। এদিকে নিজের ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ থেকে  কেনাবেচা করতে চাইলে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, মজিলা ফায়ারফক্স, অপেরা, গুগল ক্রোমের মতো ব্রাউজার থাকলেই চলবে। অবশ্য এজন্য ডিএসই নির্ধারিত অ্যাড্রেসে থাকতে হবে বিনিয়োগকারীদের।

জানা গেছে, স্মার্টফোনে শেয়ার কেনাবেচার জন্য হার্ডওয়্যারসহ তথ্যপ্রযুক্তির আরো কিছু উন্নয়নে ডিএসই সম্প্রতি প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আয় বাড়াতে উন্নত বিশ্বের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মতো ডিএসইরও বিভিন্ন ধরনের উপাত্ত বিক্রির পরিকল্পনা আছে। কয়েক বছরের মধ্যেই স্মার্টফোনে লেনদেন, ডাটা বিক্রি ইত্যাদি ডিএসইর আয়ের অন্যতম উৎস হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ডিএসইর একজন পর্ষদ সদস্য।

দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আরো আগেই সেলফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক শেয়ার কেনাবেচা চালু করে। ২০০৪ সালে তারা প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রেডিং সিস্টেম চালু করে। ২০১১ সালে এর উন্নততর সংস্করণ প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে আরো আধুনিক ও রিয়েল টাইম শেয়ারদর-সংক্রান্ত তথ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে দেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জটি।

স্টাফ রিপোর্টার, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম