আমিনুল ইসলাম: পুঁজিবাজার ভয়াবহ বিপর্যয়ের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বাজার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ভয়াবহ বিপর্যয় ২০১৫ সালেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। বরং গত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকবার কিছুদিন পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থেকে পুনরায় বড় ধরনের দরপতন ঘটে।

এতে করে বিনিয়োগকারীরা বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে এ আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করে বারবার প্রতারিত হয়েছেন। ফলে বাজারের প্রতি আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারন করছে। অন্যদিকে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাজারে গত তিন মাস ধরে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসলেও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়ায় বাজারের স্থিতিশীলতা স্থায়ী হচ্ছে না।

যেসব কোম্পানির মৌলভিত্তি দুর্বল, শেয়ার সংখ্যা কম, আয় কম এবং ডিভিডেন্ডের রেকর্ড ভালো নয়, সেসব শেয়ার দর ক্রমেই বাড়তে থাকায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে করে বাজারের স্বাভাবিক গতি বার বার নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারনে এবারও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মন্দা বাজারে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর কমে যাওয়া স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। আর এ ধরণের শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পেলে বাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। তাই এসব শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার বার বার স্বাভাবিক হতে না হতে কারসাজি চক্রের দৌরাত্বের ফলে বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। ২০১০ সালের পরও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে একাধিকবার  বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমান অবস্থায় সূচক ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজারের মধ্যে থাকলে বাজারকে পুরোপুরি স্বাভাবিক বলা যেত। এছাড়া বাজারে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দর না বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির সার্বিক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বর্তমান অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এর চেয়ে ভালো পুঁজিবাজার আশা করা যায় না। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে হলে বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইসিবি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আর এই সমন্বয়হীনতার কারণে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনয়নে যে কার্যক্রম নেওয়া দরকার তারা তা নিয়ে বরং ওপর মহল খুশি রাখার কার্যক্রমে ব্যস্ত। ফলে তাদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা রয়েছে।