আমিনুল ইসলাম :  পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ম্যাকসন স্পিনিং শেয়ার নিয়ে দু:চিন্তায় প্রহর গুনছেন বিনিয়োগকারীরা। দিনের পর দিন এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসানে বোঝা বইছেন বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া স্মরনকালের ধ্বস কাটিয়ে উঠলেও এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা এখনো লোকসানের রয়েছেন। বরং দিনের পর দিন এ কোম্পানির শেয়ারের দর তলানিতে গিয়ে ঠেকছে।

কোম্পানি মুনাফা থাকা স্বত্বে নাম মাত্র ডিভিডেন্ট দিয়ে ক্যাটাগরি ধরে রাখছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যা নামে মাত্র ডিভিডেন্ট বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন, যেখানে স্মরনকালের কালের দরপতনের রেশ এখনো কাটিয়ে উঠা যাচ্ছে না সেখানে কোম্পানি মুনাফা থাকায় স্বত্বে কি করে নাম মাত্রা ডিভিডেন্ট দেয়। এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজি ফিরে পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ কারণে এ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আটকে রয়েছে। এর ফলে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। কাঙ্খিত মুনাফা না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সূচক ও লেনদেনে।

বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, ম্যাকসন স্পিনিং নাম মাত্রা ডিভিডেন্ট দিয়েছে। কোম্পানি যে পরিমান মুনাফায় রয়েছে তাতে আরো ভালো ডিভিডেন্ট দিরেত পারতো। এতে এ কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ধারাবাহিকভাবে দর কমে ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে।

আর বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা। কারণ তারা যে দরে শেয়ার ক্রয় করেছিল সে দরের চেয়েও অনেক কম দর হওয়ার কারণে হাতে থাকা শেয়ারগুলো লোকসানে বিক্রি করছে না। যদি কোম্পানিগুলো সন্তোষজনক হারে ডিভিডেন্ড দিতো; তবে ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে লোকসান সমন্বয় হতো।

একই সঙ্গে এসব শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ত। এর ফলে এ কোম্পানির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর উপরে উঠে আসতো। দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ম্যাকসন স্পিনিং গত ছয় বছরে মুনাফা করে প্রায় ৮১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৩ এবং ১৪ সালে মুনাফা বাড়লেও ডিভিডেন্ডের পরিমাণ বাড়েনি।

রহস্যজনকভাবে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ভাল ডিভিডেন্ড দিচ্ছেনা। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্তির আগে ২০০৮ সালে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২.৪৫ টাকা অথচ বাজারে আসার পর ধারাবাহিকভাবে শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে।

বর্তমানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ০.৭৩ টাকা। এছাড়াও বাজারে তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানির সম্পদমূল্য দেখানো হয় ২৪.৫২ টাকা। ধারাবাহিকভাবে তা কমে এখন সম্পদ মূল্য দাড়িয়েছে ১৯.৭৮ টাকা। এমতাবস্তায় কোম্পানির বিনিয়োগ করে শংকায় আছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলে জানা যায়।

ম্যাকসন স্পিনিং বর্তমান শেয়ার দর ৮.৭ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর অনুমোদিত মুলধন ৫০০ কোটি টাকা আর পরিশোধিত মূলধন ২২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

সর্বশেষ প্রকাশিত কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মুনাফার পরিমাণ ৫ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ০.২৩ টাকা। ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার ১৩২টি।

এর মধ্যে ২৬ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৬১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, তালিকাভুক্তির আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালে ম্যাকসন স্পিনিংয়ের মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

২০১০ সালে মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০১১ সালে কোম্পানিটির মুনাফা করে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে মুনাফা ৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি মুনাফা বেড়ে এর পরিমাণ দাড়ায় ১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি মুনাফা করে ১৫ কোটি ৭৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০১০ কোম্পানি রাইট অনুমোদন করার পর মুনাফা বাড়ার কথা থাকলেও ঘঠছে উল্টো।

রাইট নেয়ার পরের বছরেই কোম্পানিটির মুনাফা কমে যায়। এছাড়া ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর বর্তমানে ফেস ভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে হতাশ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী মাহামুদুল আলম বলেন, কোনো কোম্পানির মুনাফার ওপর নির্ভর করে ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কত হবে। সে হিসেবে মুনাফা বাড়লে ডিভিডেন্ড বাড়বে এবং মুনাফা কমলে ডিভিডেন্ডও কমবে আর এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের প্রেক্ষাপটে মুনাফা কমলে যে হারে ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমে মুনাফা বাড়লে সে হারে ডিভিডেন্ড বাড়তে দেখা যায় না। কোম্পানিগুলো এ ধরনের প্রবণতার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বঞ্চনার মনোভাব তৈরি হয়। যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব তৈরি করতে পারে।

তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে হলে তাদের স্বার্থের প্রতি কোম্পানি কর্তৃপক্ষের অবশ্যই সচেষ্ট থাকা উচিত। এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী সাইদুর রহমান খোকন বলেন, পুজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

আর অতিরিক্ত প্রিমিয়ামসহ নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি মরার উপড় খাড়াড় ঘা। ফলে বিরুপ প্রভাবে পড়তে পারে বাজারে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্তার কাছে একটাই অনুরোধ আইপিওতে আসা কোম্পানি নিয়ে আরো বেশী যাচাই করা হোক। যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হতে পারেন।  (দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ )