আলী ইব্রাহিম : সিকিউরিটিজ আইনের কোনো রকম তোয়াক্কা করছে না রিজেন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড। করপোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন (সিজিজি) প্রতিটি কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিপালনের নির্দেশনা থাকলেও এ কোম্পানি তা করছে না। পরিচালকরা নিজেদের মধ্যেই কোম্পানির সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্য সম্পাদন করছে বলে জানা গেছে।

এতে কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। পারিবারিক আধিপত্যেই কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হবে। সুশাসন ছাড়া এ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন পরিপালন না করা পর্যন্ত কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে প্রবেশ করলে পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ লঙ্ঘিত হবে। যদিও সিজিজি আইনে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যেখানে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে সেখানে এই গুরত্বপুর্ণ আইন পরিপালন না করার বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির ৪১৯তম কমিশন সভায় করপোরেট গর্ভনেন্স গাইডলাইন সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে এ আইন জনমত জরিপের জন্য ১০ মে পর্যন্ত সময় নির্ধারিত হয়। এরপর ৭ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.এম খায়রুল হোসেন স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত করপোরেট গর্ভনেন্স গাইডলাইন নোটিফিকেশন আকারে জারি করা হয়।

এদিকে যেসব কোম্পানি সিজিজি পরিপালনে ব্যর্থ হবে তারা মূলধন উত্তোলন করতে পারবে না বলে ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়।

অথচ রিজেন্ট টেক্সটাইল সিজিজি পরিপালন ছাড়াই পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রিজেন্ট টেক্সটাইল কোম্পানি প্রায় পুরোটাই একই পরিবারের মালিকাধীন। ইয়াসিন আলী এবং ইয়াকুব আলী দুই ভাই এবং তাদের সন্তানদের মালিকানায় রয়েছে প্রায় পুরো কোম্পানিই। আর পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছে শুধুমাত্র এ পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে পারিবারিক মালিকানায় পরিচালিত হবার কারণে কোম্পানিতে নেই কোনো কর্পোরেট গভর্নেন্স। ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে আলী পরিবারের তিন সদস্যই নবীন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাকি তিন পরিচালকের বয়স যথাক্রমে ২৬, ৩০ এবং ২৪।

নবীন এসব পরিচালকের ব্যবসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিয়ে তাই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, কোম্পানির এক পরিচালক ইয়াসিন আলী কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। আইনানুযায়ি, একই সময়ে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কমর্রত থাকা যাবে না।

তাই আইনের তোয়াক্কা না করেই পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন কোম্পানির এ পরিচালক। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিবারের সদস্যের বাইরে কোনো ব্যাক্তিকে মনোনীতও করা হয়নি। এমনকি পরিবারের মধ্যে কোম্পানির মালিকানা রাখার জন্য ১৫ বছর বয়সী কিশোরীকে পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ৪.৮৬ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়গুলো নিয়ে কোম্পানির সচিব রিয়াজুল হাসান সিকদার সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ কোম্পানি সিজিজি পালন করছে না। আমরা পুরোপুরি সিজিজি পরিপালনের চেষ্টা করছি। (দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ)