স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত টেলিকম খাতের কোম্পানি গ্রামীন ফোন শেয়ারের টানা দরপতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুল পুঁজি আদৌ ফিরত পাবে কিনা এ নিয়ে হতাশার বেড়াজালে দিন কাটাচ্ছেন।

তাছাড়া দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পরিমান ততই বাড়ছে। তাছাড়া নতুন বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানির শেয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। পুঁজিবাজারে স্মরনকালের দরপতনের রেশ কাটতে না কাটতে নতুন করে এ কোম্পানির দরপতনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।

দুটি মোবাইল অপারেটরের একীভূত হওয়ার উদ্যোগ, নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তনের খবর, সিম কার্ড নতুন করে নিবন্ধন-দেশের টেলিকম খাতের এরকম নানা খবরের মধ্যে এই খাতের সবচেয়ে বড় কোম্পানি গ্রামীণফোন শেয়ারের দর ক্রমাগত দরপতন পুঁজি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক মুনাফা কমে যাওয়া শেয়ার দরে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ।

গত একমাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গ্রামীণফোনের শেয়ার দর কমেছে সাড়ে ১৭ শতাংশ; যে কারণে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৫৫ টাকা কমে বৃহস্পতিবার দিনশেষে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৬০ টাকায়।

২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা তুলে নেয় গ্রামীণফোন; যার প্রায় ৫৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে নরওয়েভিত্তিক টেলিনর এর কাছে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ১৮০ টাকা দাম ছিল কোম্পানিটির শেয়ারের। পরের বছর অক্টোবরে ১২২ শতাংশ বা ২২২ টাকা বেড়ে শেয়ারের দাম হয় ৪০০ টাকা। এরপরের ডিসেম্বর থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর নাগাদ ৩৬০ থেকে ৩২০ টাকায় ওঠানামা করে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম।

গ্রামীনফোন শেয়ারের দরপতন প্রসঙ্গে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, “রবি ও এয়ারটেলের একত্রিত হওয়ার খবরে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ভয় পেয়েছে।” এর প্রভাব পড়ছে এ কোম্পানির শেয়ারের উপর। এদিকে আগামী পাঁচ/ছয় মাসের মধ্যে মোবাইল ফোনের নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলানোর সুযোগ আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তার প্রভাবও গ্রামীণফোনের শেয়ারে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন, যার গ্রাহক সংখ্যা তাদের হিসেবে গত জুলাই শেষে ছিল ৫ কেটি ৩৯ লাখ। রবি ও এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখ। একীভূত হলে গ্রামীণফোনের নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী হবে তারাই। নম্বর স্থির রেখে অপারেটর বদলের বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। যদি গ্রামীণফোনের কিছু কাস্টমার অন্য অপারেটরে চলে যায় তাতে গ্রামীণফোনের মুনাফায়ও প্রভাব পড়বে। চলতি বছরের ছয় মাসে আগের বছরের তুলনায় গ্রামীণফোনের মুনাফা ১০ কোটি টাকা কমে হয়েছে ১ হজার ৪৮ কোটি টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামীণফোনের শেয়ার বাজারে বাড়তি দামে লেনদেন হচ্ছিল। এছাড়া কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। এর ফলে অনেক বিনিয়োগকারী গ্রামীণফোনের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিক্রির চাপে শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, পুঁজিবাজারে গ্রামীনফোন শেয়ারের দরপতনের প্রভাব পড়ছে বাজারে। এর ফলে বাজাওে কিছুটা লেনদেন সুচকের অবনতি হয়েছে। তবে বাজার খব দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারীরা এ নিয়ে দু:চিন্তার কারন নেই।