যুদ্ধাপরাধীকে আড়াই কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে তাকাফুল ইসলামী ইন্সুরেন্স
বেসরকারি সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানি তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ভুয়া বিমা দাবি পরিশোধের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অভিযুক্ত অপরাধী মীরকাসেম আলীকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা অধ্যাপক মো: ফজলে আজিম এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ তদন্তে এমন অনিয়মের সত্যতা পেলেও আত্মসাতের অর্থ ফেরত কিংবা দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৪ মে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের মালিবাগ শাখায় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট (এআইটি) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিদেশ থেকে ক্রয়কৃত একটি গ্যাস জেনারেটরের মেরিন বিমা করে ।
বীমাটির কাভার নোট নম্বর ২১৮/০৫/২০০৬। পলিসি নম্বর ২৩০২/০৬/২০০৬, এমএলবি-১৮৯,তারিখ ২৯.০৬.২০০৬।
প্রসঙ্গত, এআইটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বর্তমান যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত আসামী মীর কাসেম আলী।
অভিযোগ রয়েছে, ক্রয়কৃত ওই জেনারেটরটি আনলোড (মাল খালাস করা) করার সময় সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা বিমা দাবি পাওয়ার যোগ্য নয়। কিন্তু তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা অধ্যাপক মো: ফজলে আজিমের সাথে এআইটি চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর যোগসাজশে এটা বিমা দাবি পাওয়ার পর্যায়ে নিয়ে যায়।
এভাবে এআইটি কাগজে-কলমে ওই জেনারেটরটিকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বিমা দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ ভুয়া সার্ভে করিয়ে এর মূল্য নির্ধারণ করে ২ কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫০ টাকা। এই কতিথ বিমা দাবিটির নম্বর হল-টিআইআইএল/ মেরিন/-০৬/২০০৬।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৃত পক্ষে গ্যাস জেনারেটরটির কোন ক্ষতি না হওয়ায় এখনো দিব্যি এআইটি প্রতিষ্ঠানটি সেটা নির্বিগ্নে ব্যবহার করছেন। অথচ এটিকে ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে একই রাজনৈতিক মতাদর্শের দুই নেতা এআইটির চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলী ও তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: ফজলে আজিমের যোগসাজশে ভুয়া বিমা দাবির মাধ্যমে ২ কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ অর্থ মোট ৫টি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ মে প্রথম মেয়াদে ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর ১১/০৮/০৮,০৮/১১/০৮,০৬/০১/০৯ ও সর্বশেষ ১৭/০৩/০৯ তারিখে বিমা দাবির সব অর্থ পরিশোধ করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠানের বিমা দাবির অর্থ বিমাকৃত কোম্পানির নামে অ্যাকাউন্ট পেয়ী চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। অথচ উক্ত বিমা দাবির মোট অর্থ থেকে ২৬ লাখ টাকা চেয়ারম্যান ফজলে আজিম নিজ নামের হিসাবে একটি চেক ইস্যু করে আতœসাৎ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ অনিয়মটি পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের নজরে আসলে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটোয়ারীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে এঅনিয়মটি সত্য প্রমাণিত হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ।
বিমা দাবির অর্থ থেকে ২৬ লাখ টাকা সাবেক চেয়ারম্যান ফজলে আজিম নিজ নামের হিসাবে চেক ইস্যু করে আত্মসাতের সত্যতা স্বীকার করে এ প্রসঙ্গে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো: ফজলে আজিম বলেন, বীমাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্টের (এআইটি) সম্মতিতে এ অর্থ আমার হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। এখানে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
একই প্রসঙ্গে তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কেএএম ফেরদৌস বলেন, এআইটির বীমা দাবি নিয়ে কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। কতিথ ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস জেনারেটরটি এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে এমন প্রশ্নে বলেন, বীমা দাবি নেয়ার পরও যদি সেটা ব্যবহারযোগ্য হয় তা ব্যবহার করা যায় বলে তিনি জানান।
বিশেষ প্রতিবেদক