পুঁজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে দর হ্রাসে এগিয়ে ছিল বড় মূলধনী কোম্পানি। গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের মতো বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর দর কমায় সপ্তাহ শেষে শেয়ারবাজারে সূচক কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অবশ্য দর হারানোর তুলনায় দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা বেশি ছিল।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে সূচক মোটামুটি ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর মঙ্গলবার থেকেই বিক্রয়া দেশ বাড়তে থাকে। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারীর নগদ অর্থের চাহিদাই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সপ্তাহের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিদিনের কেনাবেচাতেই বিক্রেতার আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

তুলনামূলক স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো সাপ্তাহিক দরবৃদ্ধির তালিকায় এগিয়ে থাকায় পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর মোট ৩২৭টি কোম্পানি, করপোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৫টির। বিপরীতে কমেছে ১৪৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির বাজারদর।

তবুও ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় দশমিক ১২ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৭৬০ দশমিক ১৪-এ অবস্থান করছে। সপ্তাহ শেষে বড় মূলধনি ও তুলনামূলক ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসই-৩০ কমেছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস কমেছে দশমিক ৮০ শতাংশ।

ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে দশমিক ৪৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে মোট বাজার মূলধনে ব্লুচিপ ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অংশ আগের সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমেছে। অবশ্য সপ্তাহ শেষে মোট লেনদেন ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে। কেনাবেচার দৈনিক গড় ৪৪৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধন বৃদ্ধির দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল চামড়া খাত। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর গড়ে ৪ শতাংশ বাড়লেও টাকায় কেনাবেচা বেড়েছে ১ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ন খাতগুলোর মধ্যে দরবৃদ্ধিতে এর পর পরই ছিল প্রকৌশল ১ দশমিক ১২ শতাংশ এবং বস্ত্র দশমিক ৫২ শতাংশ।

এদিকে দর হারানো খাতগুলোর মধ্যে এক নম্বরে ছিল টেলিযোগাযোগ খাত। বাজার মূলধন ৩ শতাংশ কমার বিপরীতে এ খাতের কেনাবেচা বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। বাজার মূলধন কমার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)।

এ খাতের কোম্পানিগুলোর বাজারদর গড়ে দশমিক ৮৯ শতাংশ কমেছে। তিন নম্বরে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারো ডিএসইর মোট লেনদেনে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ওষুধ ও রসায়ন। তবে হেভিওয়েট স্কয়ার ফার্মার দর নিম্নমুখী থাকায় এ খাতের বাজার মূলধন প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে বিক্রয়চাপে ছিল সিমেন্ট খাতে। মূলত লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের দর কমায় গড়ে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ বাজার মূলধন হারিয়েছে এ খাতের কোম্পানিগুলো। তবে স্বল্প মূলধনি আরামিট সিমেন্ট দরবৃদ্ধির তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছে। দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় লিন্ডে বাংলাদেশ ছাড়া সবই ছিল স্বল্প মূলধনি কোম্পানি।

অন্যদিকে দরপতনের তালিকায় রেকর্ড ডেট পেরিয়ে আসা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর প্রাধান্য ছিল। এদিকে দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক, শরিয়া সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে কমলেও দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সূচক সিএসই-৩০।

সেখানে ১২৯টির দরপতনের বিপরীতে দর বেড়েছে ১২৮টি কোম্পানি, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডের। গত সপ্তাহে আন্ত:ব্যাংক লেনদেনে কলমানির সুদের হার ছিল ৫ দশমিক ৭০। সপ্তাহ শেষে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় ইল্ড (প্রকৃত লভ্যাংশ) দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বেড়ে ৩ দশমিক ৫-এ উন্নীত হয়েছে। গড় মূল্য আয় (পিই) অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৫-এ।

হুমায়ূন আহম্মেদ