পুঁজিবাজারে চরম খারাপ অবস্থায় রয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো। বাজারে মাঝে মধ্যে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না মিউচ্যুয়াল ফান্ডে। উল্টো প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে অধিকাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড। ফলে ৪১টির মধ্যে ২৮টির দামই নেমে গেছে অভিহিত মূল্যের নিচে।

এমনকি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট অর্থের ৭৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এ পরিমাণ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোতে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার নেই। সে কারণেই এগুলো প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, বাজারে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকাকালীন বেশ কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ড এসেছে। এগুলোতে যে শেয়ার কেনা হয়েছে তার অধিকাংশই ছিলো অতিমূল্যায়িত। ফলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো মূল্য হারিয়েছে।

তাদের মতে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম নির্ভর করে শেয়ারের নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) এর ওপর। এ্যাসেট ম্যানেটমেন্ট কোম্পানিগুলো যদি মিউচুয়াল ফান্ডের আওতায়ই ভালো ভালো শেয়ার কিনে তাহলে অবশ্যই ওই মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য ভালো অবস্থানে থাকবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দিকী  বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে যেসব মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে এর অধিকাংশই এসেছে বাজার উর্ধ্বমুখী থাকা অবস্থায়। এসব মিউচ্যুয়াল ফান্ডে উচ্চমূল্যে শেয়ার ধারণ করা হয়েছে। শেয়ার নির্বাচনে ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাক এ্যাসেট ম্যানেজমেন্টরা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পরিমাণ খুবই কম। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নতুন নতুন মিউচ্যুয়াল ফান্ড আনা যেতে পারে। তবে তার আগে এটি নিশ্চিত করতে হবে যাতে এসব মিউচ্যুয়াল ফান্ড দক্ষ ব্যবস্থাপক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হাসান  বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজারের গভীরতা ধরা হয়। এর মাধ্যমে বাজারের শক্তি ও তারল্য পরিমাণ করা যায়। উন্নত বিশ্বের পুঁজিবাজারে বাজার মূলধনের ৪০ শতাংশই থাকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। সেখানে বাংলাদেশে আছে মাত্র দ্‌ুই শতাংশের মতো।

তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খুবই কম। আবার এই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের যারা ব্যবস্থাপনায়(এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) আছেন তাদের বেশিরভাই সম্পদ নির্বাচনে খুবই নিম্নমানের দক্ষতা দেখিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতো আচরণ করে তারা উচ্চদামে নিম্নমানের শেয়ার কিনেছেন। এর অর্থ হলো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না এবং যারা আছেন তাদের দক্ষতা খুবই নিম্নমানের।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড সম্পর্কে আমাদের ধারণাও নেতিবাচক। অবার বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে কম মুনাফা হয়, আর শেয়ারে বিনিয়োগ করলে দ্রুত বেশি মুনাফা হয়। এমন ধারণার কারণেই দেশের শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড গতি পাচ্ছে না, বলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে গত কয়েক মাস ধরে বেশ ইতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে শেয়ারবাজারে। বাড়ছে মূল্য সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধনের পরিমাণ। এ অবস্থাতেও উল্টা অবস্থা বিরাজ করছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।

সর্বশেষ মঙ্গলবারের (১১ আগস্ট) লেনদেন শেষে ৪১টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৮টির দামই রয়েছে অভিহিত মূল্যের নিচে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগকারীদের লাভের পরিবর্তে লোকসানের পাল্লাটাই বেশী ভারী হচ্ছে।

মঙ্গলবারের লেনদেন শেষে ফেসভ্যালুর নিচে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে ১০টির দাম রয়েছে ৫ টাকার নিচে। এরমধ্যে আছে প্রাইম ব্যাংক প্রথম, পিএইচপি প্রথম, ফিনিক্স ফাইন্যান্স প্রথম, এনসিসিবিএল, এমবিএল প্রথম, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ, আইসিবি এএমসিএল তৃতীয় এনআরবি, গ্রিন ডেল্টা, ইবিএল এনআরবি ও ডিবিএইচ প্রথম মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা অন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে আছে ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম, এসইবিএল প্রথম, রিলায়েন্স ওয়ান, পপুলার লাইফ প্রথম, এনএলআই প্রথম, আইএফআইএল প্রথম, আইএফআইসি প্রথম, আইসিবি সোনালী ব্যাংক প্রথম, আইসিবি এমসিএল দ্বিতীয়, আইসিবি দ্বিতীয় এনআরবি, ফাস্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম, এক্সিম ব্যাংক প্রথম, ইবিএল প্রথম, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ, এআইবিএল প্রথম ইসলামী, এবি ব্যাংক প্রথম, প্রথম জনতা ব্যাংক ও আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড প্রথম।

শান্তনা রহমান

স্টাফ রিপোর্টার