পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পুঁজিবাজার হাঁটছে উল্টো পথে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ছেড়েছেন পুঁজিবাজার। লেনদেন কমায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে। নতুন কোম্পানির পুঁজি সংগ্রহের পথও সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কী হচ্ছে পুঁজিবাজারে। বর্তমান পুঁজিবাজার ৯৬ ও ২০১০ সালের দরপতনকে হার মানিয়েছে। টানা দরপতনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
অন্তবর্তী সরকারের গত ১৫ মাসে যে ভাবে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছে তা ২০১০ সালের ধসকে হার মানিয়েছে। ফলে দিন দিন পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান পুঁজিবাজারের যে অবস্থা চলছে তাতে ৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বলে অভিযোগ করছেন একাধিক বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগের সুরে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের যে বেহাল অবস্থা তাতে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই নিরব আচরন করছেন। বাজার ইস্যুতে মুখ খুলছেন না তারা। অব্যাহত দরপতনের মধ্যে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এমন পতনের প্রকৃত কারণ যেন খুঁজে পাচ্ছে না কোনো পক্ষই। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদও থামছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ তত বাড়ছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরও ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মানেই লোকসান। যার ফলে পুঁজিবাজারে নজিরবিহীন অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনকি পুঁজিবাজার থেকে নীরবে প্রস্থান করছেন হাজারো বিনিয়োগকারী। দীর্ঘমেয়াদি মন্দা, আস্থার সংকট এবং ভালো শেয়ারের অভাবে গত ১৫ মাসেই পুঁজিবাজার ছেড়েছেন বা নিস্কিয় হয়ে পড়েছেন ৬২ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী। ফলে পুঁজিবাজারে গত ১৫ মাসেও আস্থা ফেরাতে পারেনি রাশেদ মাকসুদ কমিশন।
গত বছরের ১৮ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ১০৭৮ পয়েন্ট। মুলত রাশেদ মাকসুদ কমিশন যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিএসই সূচক ছিলো ৫৭৭৮.৬৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৪৮৮৬.৭২ পয়েন্ট। তবে নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ ১২২ পয়েন্ট সূচকের বড় দরপতনে ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়ে ছিলো ৪৭০২ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন যাবত একটি চক্র অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দিয়ে পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবাই বিষয়টি জানে। কিন্তু কেউ কিছুই করতে পারছে না। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে ফোর্স সেল। ফোর্স সেলের চাপে পুঁজিবাজারের এখন বেহাল দশা।
রীতিমতো লন্ডভন্ড চলছে পুঁজিবাজারে। বাজারের বর্তমান দুরবস্থার প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। আর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সুশাসন, প্রয়োজনীয় নজরদারি ও অপরাধীর যথাযথ শাস্তির অভাবে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এমনটি হতো না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮৮৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৯১ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৮৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪ টির, দর কমেছে ৩০৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪ টির। ডিএসইতে ৩৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪০৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৪৭ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ২৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৬ টির এবং ১৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

