উৎপাদন বন্ধ কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে পুঁজিবাজারে হরিলুট!
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সময় রুগ্ন কোম্পানি পুনর্গঠনের নামে নতুন কারসাজি শুরু হয়। এতে যুক্ত হন পুঁজিবাজার কারসাজিতে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরোসহ অনেকে।
আল-আমিন কেমিক্যাল নামে বাজার থেকে একটি তালিকাচ্যুত রুগগ্ন ও বন্ধ কোম্পানিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে উৎপাদন শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারসাজির মাধ্যমে শতকোটি টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন হিরো ও তাঁর সহযোগীরা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সরেজমিন প্রতিবেদন এবং অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক শিবলীর পদত্যাগের পর হিরোদের সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন বর্তমান বিএসইসি শেয়ারবাজারে অনিয়ম অনুসন্ধানে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি যেসব ইস্যুতে অনিয়ম ও দুর্নীতি উদ্ঘাটনের দায়িত্ব পেয়েছে, আল-আমিন কেমিক্যাল তার অন্যতম। তেমনি এরকম নানা গুজব ছড়িয়ে সম্প্রতি উৎপাদন বন্ধ ও জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস (বিডি ওয়েল্ডিং) দীর্ঘদিনের চরম আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এবং বন্ধ থাকা কারখানাটি পুনরায় চালু করতে সক্রিয়ভাবে নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজছে কোম্পানি থেকে এমন তথ্য প্রকাশ করা হলেও আদৌ এর কোন সত্যতা মিলছে না। মুলত শেয়ার কারসাজির কারণে এরকম গুজব রটানো হচ্ছে। বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার কারসাজিতে কোম্পানির পরিচালকরা সরাসরি জড়িত বলে নানা সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সম্প্রতি পুঁজিবাজারে কারসাজি ও গুজব প্রতিরোধে উৎপাদন বন্ধ থাকা ৩০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির নাম প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে ডিএসইর ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
ডিএসই জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এসব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বাজারে বিভিন্ন সময়ে গুজব ছড়িয়ে শেয়ারদরের অস্বাভাবিক ওঠানামা ঘটানো হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে ক্ষতির শিকার হন। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিএসইর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো হলো: অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, অ্যারামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বারাকা পাওয়ার, দুলামিয়া কটন, এমারেল্ড অয়েল, ফ্যামিলি টেক্স (বিডি), জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, খুলনা পাওয়ার, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং,
মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং মিলস, মিথুন নিটিং, নিউ লাইন ক্লোথিংস, নর্দার্ন জুট, নুরানি ডায়িং, প্রাইম টেক্সটাইল, আরএসআরএম, রিজেন্ট টেক্সটাইল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, তুং হাই নিটিং, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি, রহিমা ফুড কর্পোরেশন ও হামিদ ফ্যাব্রিক্স।
এর মধ্যে শ্যামপুর সুগার মিলস ও উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। শেয়ারবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করলেও এ কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে হামিদ ফ্যাব্রিক্স। কোম্পানিটি ২২ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে ১২ আগস্ট উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে রহিমা ফুড কর্পোরেশন। ডিএসই বলছে, তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত না হন এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৮ এর পাতা ২ কলাম

