শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাজারে ক্রমাগত দরপতনের ফলে পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবার প্রত্যাশা ছিল পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের মাথায় পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হয়নি।

বরং গত এক বছরে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট সূচক উধাও হয়ে গেছে। গত বছরের ১১ আগস্ট ডিএসইর সূচক ছিলো ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট। মুলত ১৪ মাসের ব্যবধানে ১৫ অক্টোবর ডিএসই সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১৬ পয়েন্ট।

ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল লুটপাট হওয়া পুঁজিবাজারে সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গত এক বছরে সরকারের সদিচ্ছা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানা উদ্যোগে নিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন মেলেনি।

এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী, কিছু ব্রোকার প্রতিনিধি এবং বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলো মনে করছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতাই পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট ও অস্থিরতার মূল কারণ।

ফলে দেশের পুঁজিবাজার যেন ধীরে ধীরে এর পথ হারাচ্ছে। এক সময় এই বাজার ছিল স্বপ্ন বুননের ক্ষেত্র হাজারো সাধারণ বিনিয়োগকারী আশায় বুক বাঁধতেন, শেয়ার কিনে জীবনের উন্নতির গল্প লিখতেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের টানা মন্দাভাব, আস্থাহীনতা আর অস্থিরতায় সেই স্বপ্নের জায়গায় এখন ভর করছে হতাশা। এর ফলে মাত্র ৯ মাসেই ৬২ হাজার বিনিয়োগকারী নিস্কিয় হয়ে পড়েছেন। কেউ পুরোপুরি বাজার ছেড়েছেন, আবার অনেকেই শেয়ারহীন হয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে সময় পার করছেন।

গত দেড় মাসে বাজারের এই পতন বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গের এক হৃদয় বিদারক গল্প। শেয়ার কেনার সময় যে স্বপ্ন নিয়ে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলেন, সেই পুঁজির এখন শুধু ক্ষয় দেখতে পাচ্ছেন। বাজারের এই ধারাবাহিক পতনে অনেকেই এখন মূলধন হারিয়ে দিশেহারা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক হারিয়েছে ৫২৭ পয়েন্ট। গত মাসের ৯ সেপ্টেম্বর ডিএসইর সূচক ছিলো ৫৬২৭ পয়েন্ট। এক মাসের ব্যবধানে ১৫ অক্টোরব সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ৫১১৬ পয়েন্ট।

স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী আজমত হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা পুঁজিবাজার নয়, এটা লুটের বাজার। গত এক মাসে ৫’শত পয়েন্টের উপর সূচক দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব আচরন করছেন। দেখে মনে হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ভুল করছি। তাছাড়া সারা জীবনের সঞ্চয়টুকু শেষ বয়সে একটু নিশ্চিন্তে থাকার জন্য এখানে বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, এই ভুল যেন আর কেউ না করে। কীভাবে সংসার চালাব, সেই চিন্তাই এখন বড়।

এনএলআই সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে আস্থা রাখতে পারছি না। প্রতিদিন লোকসান দেখতে দেখতে বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। গত এক মাসের বেশি সময় টানা দরপতনে ৪০ শতাংশ পুঁজি হারিয়েছি।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সুরে বলেন, পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অভিযোগ উঠেছে, পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে যখন রক্তক্ষরণ হচ্ছে তখন ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থারা ‘বড় বড় কথা’ আর আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। বাজারকে চাঙ্গা করতে বা নতুন বিনিয়োগকারী টানতে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।

বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে তারল্য ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন ও মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপগুলো দ্রুত না নিলে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়ে যাবে।