স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে ঢুকছে নতুন বিনিয়োগ। অনেক বড় হবে বাজার এমন আশায় বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও অপেক্ষায় আছেন নতুন বিনিয়োগের। খুব দ্রুতই বাজার আরো বেশি ইতিবাচক ধারায় ছুটবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। কারণ বর্তমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উত্তম সময়। অধিকাংশ শেয়ারের দাম ফেসভ্যালু নিচে। এ অবস্থায় আইসিবির নতুন বিনেোগ শুরু হলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরে আসলে বানের মতো টাকা ঢুকবে পুঁজিবাজারে।

এদিকে তারল্য সংকট দূর করতে এবং একটি প্রাণবন্ত পুঁজিবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত একটি তহবিল পেতে যাচ্ছে। চার শতাংশ রেয়াত সুদে আইসিবিকে এই অর্থ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যবস্থায় গ্যারান্টর হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একটি সূত্র।

জানা গেছে, নানা কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি লোকসান গুনছে। লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে লাভে নিয়ে আসা এবং আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এই তহবিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইসিবির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। আইসিবি গত এপ্রিল মাসে এ তহবিলের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে পুঁজিবাজারের গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসে মধ্যে প্রথম কার্যদিবস দরপতনের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও শেষ কার্যদিবস হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ উত্থানে। মুলত গত রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর পর সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সূচকের কিছুটা উত্থানে লেনদেন শেষ হলেও শেষ কার্যদিবস রেকর্ড পরিমান সূচকের উত্থানে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরছে। তবে স্বস্তি ফিরলে এখনোও পুরোপুরি ভয় কাটেনি। কারণ গত প্রায় আড়াই বছর ধরে পতনের বৃত্তে আটকে ছিলো দেশের পুঁজিবাজার।

ফলে লাখের বেশি বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে পথে বসে গেছে। গত আড়াই বছরে প্রায় সপ্তাহেই বিনিয়োগকারীরা পতনের বড় ঝাপ্টা দেখেছে। কোন কোন দিন পতনের তাণ্ডব সেঞ্চুরী ছুঁয়েছে। এই সময়ে কিছু কিছু সময়ে উত্থানও হয়েছে। যা ছিল যৎসামান্য। যদিও দরপতনের বহু সেঞ্চুরী দেখেছে। দীর্ঘ দিন পর বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে উত্থানের সেরা সেঞ্চুরী দেখেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক বেড়েছে প্রায় ১২৪ পয়েন্ট। যা স্বরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে স্বস্থি ফিরছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাকরিবিধি সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির উদ্যোগের এ খবরেই মূলত পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তাছাড়া সরকারি কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির বিষয়টি এখনো সময়সাপেক্ষ। তারপরও বাজারে এর একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে বাজারে। এতে গত দুই কার্যদিবসে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ১৫৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে বড় উত্থান হয়েছে বৃহস্পতিবার।

বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে টানা দরপতন চলছিল। এই পতনের ফলে বাজার যেখানে নেমে এসেছিল, তার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। এ অবস্থায় আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাচনের পর বাজার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সেটি হয়নি, উল্টো দরপতন অব্যাহত ছিল।

এ অবস্থায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোটা সময়ের দাবি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির খবরটি বাজার ঘুরে দাঁড়াতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। বাজেটে পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ করা হয়েছে। সেই নেতিবাচক খবরকে পাস কাটিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিনিয়োগের উদ্যোগের খবরটি বড় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় উত্থান হলেও লেনদেন কমেছে। তবে গত এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার ওপর। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এতে ঈদের পর লেনদেন হওয়া ১১ কার্যদিবসেই ডিএসইর বাজার মূধন প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

সূত্র মতে, বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বেড়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ২ হাজার ৮০২ কোটি ১৩ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৩৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৯৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ২০৮ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৩ টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩২৯ টির, কমেছে ৪০ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪ টির শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।