শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সর্বকালের বড় ধস হয় ২০১০ সালে। এরপর আর কাঙ্খিতভাবে এই বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কয়েকবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী হয়নি। যে কারণে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি আবারও বাজারে দীর্ঘমেয়াদি পতন দেখা দিয়েছে। ফলে সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

ভুক্তভোগিদের সাথে আলাপ করে জানা যায় মূলত তিন কারণে বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন তারা। এর মধ্যে প্রথম কারণ বাজারে স্থিতিশিল পরিবেশ না থাকা। অথাৎ পুঁজির নিরাপত্তা পাচ্ছেন তারা। লাভের বদলে লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে তাদের। দ্বিতীয় কারণ ব্যাংকে সুদের হার বেড়ে যাওয়া। এখন বেশিরভাগ ব্যাংকে যে সুদ দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মতে তা পুঁজিবাজারের চেয়ে অনেক ভালো।

তাদের ভাষ্য এখানে টাকা রাখলে অন্তত লোকসানের হিসাব করতে হবে না। মাস শেষে কিছু হলেও লাভ পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি টেনশন কমে যাবে। যে কারণে তারা পুঁজিবাজার ছেড়ে ব্যাংকের দিকে ধাপিত হচ্ছেন। বর্তমানে ব্যাংকে আমানত রেখে ১০ থেকে ১৩ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে। তিন কারণ সম্প্রতি গেইন টেক্স ইস্যুতে অস্থিতিশীল হচ্ছে পুঁজিবাজার। গেইন ট্যাক্স আরোপের খবর পুঁজিবাজারে তীব্র আস্থার সংকট তৈরি করেছে। ফলে গেইন টেক্স ইস্যুর গুজবে টানা দরপতনে হয়েছে পুঁজিবাজার।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধির পরও থামছে না পুঁজিবাজারে টানা দরপতন। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে টানা দরপতনের মধ্যে দিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ততই বেড়েছে। যার ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি অনাহী হয়ে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর টানা দরপতনে অভিবাভকহীন শুন্য পুঁজিবাজার। কারণ পুঁজিবাজারে টানা পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি পুঁজিবাজার গতিশীল করতে আইসিবির ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) হচ্ছে। সিকিউরিটিজ কেনার সীমা ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এর কোন প্রভাব নেই পুঁজিবাজারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কোন পথে হাটছে দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত কী। ব্যাংক- ফাইন্যান্সের মত পুঁজিবাজার কী ন্যুয়ে পড়লো। এর থেকে উত্তরনের উপায় কী।

এছাড়া বিএসইসির কোনো উদ্যোগই বাজারে পতন ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না। কিছুদিন পরপর অনিয়ন্ত্রিত উত্থান পতন বাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির ব্যর্থতাকে বারবার সামনে নিয়ে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি সংস্থাটি কারসাজি রোধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, ঘন ঘন নীতির পরিবর্তনে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের। গুজব আর ফোর্স সেলও চরমভাবে ক্ষতি করছে পুঁজিবাজারকে। পুঁজিবাজারের এমন ধস ৯৬ ও ২০১০ সালেও দেখিনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশ^াসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পথের ফকির হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তারা । এভাবে চলতে থাকলে এ বাজারে কেউ বিনিয়োগ করতে আসবে না।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যেখানে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে কী ভাবে নারী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার মুখী করতে চায়। আমাদের মত পুরুষ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ঠিক থাকতে পারছি না। সেখানে নারী বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মধ্যে কী ভাবে বিনিয়োগ করবে। আর নারী বিনিয়োগকারীরা কখনো ঝুঁকির মধ্যে বিনিয়োগ করে না বলে তারা জানান।

বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি লোকসানের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও কারসাজি চক্র শেয়ার বিক্রি করে বাজার অস্থিতিশীল করছে।