শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে রক্তক্ষরণ থামছে না। টানা দরপতনের মধ্যে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পতনের প্রকৃত কারণ খুঁজে পাচ্ছে কেউ। একের সময় একেক ইস্যু সামনে তুলে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন ভুমিকা নিতে পারছেন না। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদও থামছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ তত বাড়ছে।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ঢাকা এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক উধাও ৮৬ পয়েন্টের বেশি। লেনদেনের শুরুতে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা সংকট দেখা যায়। এরপর শেয়ার বিক্রির চাপে ৩ শত বেশি কোম্পানি ক্রেতা শুন্য হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজার টানা দরপতনে আমাদের হ্রদয়ে রক্তরক্ষরণ চলছে। এ ভাবে চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হয়ে পড়বে। তাছাড়া পুঁজিবাজারের এমন ভয়াবহ অবস্থা দীর্ঘ ২০ বছরের মধ্যে দেখিনি। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে বর্তমান বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আশার আলো দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করলেও টানা দরপতনে মুখ খুলছে না। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পাপ করছেন বলে মন্তব্য করেন।

স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী মজিবুল হক বলেন, আমি পুঁজিবাজারে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় করি। আমার জীবনে এই রকম পরিস্থিতি দেখিনি। মহামারি করোনার সময়েও পুঁজিবাজারে এই রকম হাহাকার দেখা যায়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পতন, আসন্ন বাজেটে গেইন ট্যাক্স আরোপ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চড়া সুদ-সহ নানা কারণে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। তবে ঢালাওভাবে টানা পতন কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না। এর পেছনে একটি গোষ্ঠি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

তারা অভিযোগ করছেন, এনবিআর-এর কিছু পদস্থ কর্মকর্তা যেকোনো কারণেই হোক পুঁজিবাজারের ওপর সন্তুষ্ট নন। তারা চায় না দেশে পুঁজিবাজার বলে কিছু থাকুক। যে কারণে প্রতি বছরই পুঁজিবাজার নিয়ে অনর্থক টানা-হেঁচড়া করে। যার ফলে প্রতি বছরই বাজেটের আগে আগে পুঁজিবাজার অস্থির হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪৮ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৮৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২ টির, দর কমেছে ৩৪৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯ টির। ডিএসইতে ৪০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৭৬ কোটি ৭৯ লাখটাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২৩ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৮৬ টির এবং ১২ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।