শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: কোন পথে হাঁটছে দেশের পুঁজিবাজার, এ প্রশ্ন এখন হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা আবারও আস্থার সংকটে পড়েছেন। ফলে আস্থা সংকটের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বড় বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে অবস্থান করছেন। এছাড়া টানা দরপতনে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। লোকসান কাটিয়ে ওঠার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ফলে দিন যতই যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আতঙ্ক তত বাড়ছে। আতঙ্কে অনেকেই দিনের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন।

ফলে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা যাচ্ছে। এতে সূচকের যেমন পতন হচ্ছে, তেমনি কমে আসছে লেনদেনের গতি। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানা উদ্যেগেও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। কিন্তু কেন এ অবস্থা?

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা শেয়ার নিয়ে কারসাজি। রোববার দরপতনের মধ্যেও ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা বেশির ভাগ কোম্পানিই ছিল কারসাজির শেয়ার। অথচ এ সময়ে ফান্ডামেন্টালি স্ট্রং অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারদর কমে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাহলে কীভাবে বাজার নিয়ে আস্থা থাকবে বিনিয়োগকারীদের? এছাড়া দীর্ঘদিন বাজারে কোনো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এছাড়া পুঁজিবাজারে এমন সব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, যেসব কোম্পানি বছর না ঘুরতেই লোকসান গুনছে?

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, দীর্ঘদিন বাজার ফ্লোরপ্রাইসে আটকে ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেওয়া হলেও এখন আবার শেয়ারের দাম কমার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বাজারে শেয়ারের দরপতন রোধ করা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজারের মন্দা অবস্থার মধ্যেই আগামী বাজেটে মূলধনী মুনাফার ওপর সরকারের করারোপের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে আস্থাহীনতা কাজ করছে।

শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের তথ্য বলছে, গত দুই সপ্তাহে ৭ হাজার ৫৪৩ জন বিনিয়োগকারী তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। তার বিপরীতে ২ হাজার ১২৬ জন বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে যুক্ত হয়েছেন। এ হিসাবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী বাজার ছাড়ছেন।

এদিকে টানা দরপতনে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৭ হাজার ৩৬৭ পয়েন্ট। তিন বছর ৭ মাস ৯ দিন পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে। এই সময়ের মধ্যে সূচক কমে গেছে ১ হাজার ৯৩৬ পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচ্য সময়ে পুঁজিবাজারে ১৫টির বেশি নতুন কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার সূচকে যোগ হয়েছে। যদি কোম্পানিগুলোর শেয়ার সূচক থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ডিএসইর সূচকের পতন দাঁড়াতে পারে ২ হাজার ২০০-এর বেশি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৬৯৬। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে। ঐ সপ্তাহে সূচক কমে যায় ১৭৯ পয়েন্ট। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচক পড়ে গেল আরও ৮৬ পয়েন্ট।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও নানা কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে। তারপরও প্রায় সব দেশের শেয়ার মার্কেট রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারও রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে। এমনকি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা শ্রীলংকার শেয়ার মার্কেটও ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট। এখানে সব খাতেই কম বেশি উত্থান হয়েছে। কিন্তু শেয়ার মার্কেট আরও পেছনের দিকে ধাবিত হয়েছে।