পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা
![](http://www.sharebarta24.com/wp-content/uploads/2022/09/Dse-Cse.jpg)
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঈদের পর ফের টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে পুঁজিবাজার। দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ততই বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি অনাহী হয়ে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর টানা দরপতনে অভিবাভকহীন শুন্য পুঁজিবাজার। কারণ পুঁজিবাজারে টানা পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তবে বিএসইসির কোনো উদ্যোগই বাজারে পতন ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না। কিছুদিন পরপর অনিয়ন্ত্রিত উত্থান-পতন বাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির ব্যর্থতাকে বারবার সামনে নিয়ে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি সংস্থাটি কারসাজি রোধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি লোকসানের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক টানা দরপতনের কারণে শেয়ারের বিক্রির চাপ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। অন্য দিকে আছে চরম ক্রেতাসঙ্কট।
তবে এর আগে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন ঠেকাতে পূর্বে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ফ্লোরপ্রাইস আরোপ। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার দোহাই দিয়ে এ ব্যবস্থা নিয়েছিল কমিশন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেলে তড়িঘড়ি করে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে কি ঝুটলো প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রায় দেড় বছর ফ্লোরপ্রাইসের মাধ্যমে মূল্যসূচক তথা দরপতন আটকে রাখা গেলেও তা প্রত্যাহারের কিছুদিনের মধ্যেই ফ্লোরপ্রাইসের আগের অবস্থানে ফিরে গেল পুঁজিবাজার। এর ফলে কোন সিদ্ধাই যে বাজার স্থিতিশীলে কার্যকর হচ্ছে না তা আবারও প্রমাণ হলো।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের ৬ হাজার পয়েন্ট একধরনের মনস্তাত্ত্বিক সীমা হয়ে উঠেছে। তাই যখন সূচক ৬ হাজারের কাছাকাছি বা নিচে নেমে আসে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে। এ কারণে নতুন করে কেউ বিনিয়োগ করছে না, উল্টো অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বসে আছেন।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে এরই মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফোর্সড সেল শুরু করেছে। ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম যখন একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে যায়, তখন ঋণের টাকা উদ্ধারে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর শেয়ার বিক্রি করে দেন। এটি পুঁজিবাজারে ফোর্সড সেল হিসেবে পরিচিত।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজার কিছু বাজে কোম্পানি নির্ভর হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে না। এর বিপরীতে বাজে কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। তাই তাঁরা অনেকটাই বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে ডিএসইতে লেনদেন কমে ৫০০ কোটির ঘরে নেমেছে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার যেখানে চলে গেছে, তাতে ভালো শেয়ার কিনলেই এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই ভালো শেয়ারে বিনিয়োগের আগ্রহও হারিয়ে ফেলছি, নতুন করে বিনিয়োগেরও সাহস পাচ্ছি না।
এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৬২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৫ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৬ টির, দর কমেছে ২২২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৭ টির। ডিএসইতে ৪৮২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৪০ কোটি ২৩ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪৫৯ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৩ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৬ টির এবং ২৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।